সাতক্ষীরা-১ আসনে জামায়াতের বিপক্ষে লড়তে চান সাংবাদিক মামুন


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:৫৭ পিএম, ২২শে আগস্ট ২০২৫


সাতক্ষীরা-১ আসনে জামায়াতের বিপক্ষে লড়তে চান সাংবাদিক মামুন
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে সাংগঠনিক শক্তিনিয়ে জোরে সোরে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি ও জামায়াত ইসলাম। দীর্ঘ দিন এ আসনটি আকড়ে ধরে রেখেছিল আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কাসপার্টি এবং তৎকালিন চারদলীয় জোটের নেতৃত্বাধীন বিএনপি। তবে আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া জামায়াত। আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত এ আসটিতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে একক ভাবে বিজয় ছিনিয়ে আনার মত সক্ষমতা রয়েছে জামায়াতের। তবে বিএনপি’র প্রার্থী নির্বাচন সঠিক হলে ও দলীয় কোন্দল ভূলে ঐক্যবদ্ব থাকলে জামায়াতের সাথে তীব্র লড়াই হবে বিএনপি’র।


সাতক্ষীরা জেলার তালা ও কলারোয়া উপজেলা এবং পাটকেলঘাটা থানা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসন। এরমধ্যে ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। গত নির্বাচনে এ আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩৬ জন। এবারের সংসদ নির্বাচনে ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার।


২০০১ সালের বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ও তার বিপরীতে ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নির্বাচনী ফলাফলের পূর্বের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখাযায় এ আসনটি বরাবরি আওয়ামী লীগ, জাতীয়পার্টি ও জায়ায়াত ইসলামের দখলে ছিল।


১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সৈয়দ দিদার বখত, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের এ্যাডভোকেট আনসার আলী নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ও জামায়াত বিহীন ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখ্ত সাকী, ১৯৯৯ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বি. এম. নজরুল ইসলাম, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রার্থী বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির এ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ স্বপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।


আরও পড়ুন: মৎস্য খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি: খাদ্যনিরাপত্তা ও রপ্তানি সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত: সাকিফ শামীম


৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও পট পরিবর্তনের পর বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উদ্দীপনা। আর আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কোন নাম গন্ধ নেই। জাতীয় পার্টিও চেয়ে আছে কি হয়-না হয় পরিস্থিতির দিকে।


বর্তমানে এই আসনে নির্বাচনের মাঠে সরব আছেন সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কলারোয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্তারুজ্জামান। এছাড়া দুজন সাংবাদিকও চেষ্টা করছেন এই আসন থেকে মনোনয়ন পাবার। এরমধ্যে দৈনিক আমাদের সময় এর কুটনৈতিক বীটের প্রধান আরিফুজ্জমান মামুন ও দৈনিক ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান। তবে এ আসনটি দীর্ঘ দিন আকড়ে ধরে বিএনপিকে সুসংগঠিত করে শক্তিশালি অবস্থানে নিয়ে গেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব।


নির্বাচন প্রসঙ্গে হাবিবুল ইসলাম হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে, আমাকে সাজানো মিথ্যা মামলায় আওয়ামী লীগ ৭০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তালা-কলারোয়াবাসী যে ভালোবাসা দিয়েছে তা আমি আজীবন মনে রাখবো। দল আমাকে আগেও একাধিকবার জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আমি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আশাকরি আগামীতে দল আমাকে আবারও সুযোগ দেবে এবং মনোনয়ন নিয়ে ইনশাল্লাহ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।  


বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান বলেন, এই আসন থেকে আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। দল করার জন্য আমাকে একাধিকবার কারাবরণ করতে হয়েছে। দল মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ তার।


একইভাবে সাতক্ষীরা-১ আসনের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দৈনিক আমাদের সময় এর কুটনৈতিক বীটের প্রধান আরিফুজ্জমান মামুনও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি। তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর  বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত মামুন বর্তমানে ডিপ্লোমেটিক করসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ-ডিক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিপক্ষে জনমত গঠনে কূটনৈতিক অঙ্গনে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া তিনি জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগ-যুবলীগের অত্যাচারে আহত হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি জাসাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্র কমিটির দুই দফা সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন।


আরিফুজ্জামাম মামুন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষণা অনুযায়ি ক্লিন ইমেজ, শিক্ষিত ও তরুণদের প্রার্থী করা হবে। চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজদের মানুষ দেখতে চায়না। সে হিসেবে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে বিজয় নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ।


এ আসনে জামায়াত চুড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ’র নাম ঘোষনা করেছে। তিনি ইতিমধ্যে মাঠে সরব আছেন। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহাল্লায় তার পোস্টার, ব্যানার ছেয়েগেছে। তিনি জামায়াতের হেবিওয়েট ও শক্তিশালি প্রার্থী।


এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। আগে তফসিল ঘোষণা হোক, তারপর দলের সিদ্ধান্ত হলে সেই  প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। স্থানীয়দের মতে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সৈয়দ দিদার বখতের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত এ আসনটিতে যদি উদ্বুত পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির উপর তাদের ভোট ভর করে সে ক্ষেত্রে হেবিওয়েট প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ দিদার বখতও পিছিয়ে নেই। সে ক্ষেত্রে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ’র সাথে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।


আরও পড়ুন: জনসংখ্যা থেকে জনসম্পদ: আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও রোডম্যাপ


এ আসন থেকে এবার জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি’র সাতক্ষীরা জেলার যুগ্ন-সমন্বয়ক প্রিন্সিপাল আক্তারুজ্জান প্রার্থী হতে পারেন। তিনি বলেন দল যদি সাতক্ষীরা (সদর)-২ আসন থেকেও মনোনয়ন দেন সে ক্ষেত্রে তিনি সদর আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিবেন।


সবমিলিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনও ঘোষণা না হলেও সাতক্ষীরা-১ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। তবে বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী রয়েছেন দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।


তবে আওয়ামী লীগ বিহীন এ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় বিভেদ ও কোন্দল ভুলে ঐক্যবদ্বভাবে কাজ করতে না পারলে দলীয় কোন্দলের ফসল ঘরে তুলতে পারে জামায়াত এমনটাই মনে করে স্থানীয়রা।


এমএল/