আ. লীগ কাউন্সিলরের ব্যবসায়িক পার্টনার বিএনপি নেতা, রেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আ. লীগ কাউন্সিলরের ব্যবসায়িক পার্টনার বিএনপি নেতা, রেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা

চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেডের কলসিদীঘি এলাকায় সালাহ উদ্দিন নামে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে রেলের ত্রিশ শতক জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। দখলকৃত অর্ধশত কোটি টাকা দামের এ জায়গায় তিনি গড়ে তুলেছেন রিকশার গ্যারেজসহ ভাড়া ঘর ও দোকানপাট। সেখান থেকে প্রতি মাসে ভাড়া আদায় করেন দেড় লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, রেল কমকর্তাদের ম্যানেজ করে লোকজনকে ভুয়া ইজারার কাগজ দেখিয়ে আশপাশের আরও ৫০ শতকের মতো জায়গা দখলের পায়তারা  করছেন সালাহ উদ্দিন।  আর এ কাজে নাম ভাঙছেন স্থানীয় কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা জিয়াউল হক সুমনের। বলছেন, কাউন্সিলর সুমন তার ব্যবসায়িক পার্টনার এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু।

তবে রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, ‌ওই এলাকায় কিছু জায়গার ইজারা দেওয়া হলেও সালাহ উদ্দিন নামে কোনো ইজারাদার নেই। আর তাকে জায়গাটি দখল করে দেয়ার বিষয়ে এলাকাবাসির অভিযোগও সঠিক নয়। সেখানে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উচ্ছেদের জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কলসিদিঘী রেলবিটে রেলওয়ে প্রায় ৩০ শতক জায়গা দখল করে ভাড়া ঘর, দোকান ও রিকশার গ্যারেজ করে ভাড়ায় দিয়েছেন। সেখান থেকে প্রতিমাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা ভাড়া আদায় করেন। তার পাশে ৫০ শতকের মতো জায়গা দখল করে স্থানীয় ৪০/৪৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তাদের উচ্ছেদ করে জায়গাটি দখল করতে বছর দুয়েক আগে সালাহ উদ্দিন রেল কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ওই জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় রেল কর্মকর্তাদের সাথে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন অভিযানে সরাসরি অংশ নেন। রেল কর্মকর্তারা সালাহ উদ্দিনের দখলকৃত ২০ শতক জায়গা বাদ দিয়ে বাকি ৫০ শতক জায়গায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেন। ওইসময় উচ্ছেদকৃত জায়গাটি সালাহ উদ্দিন ইজারা নিয়েছেন বলে জানিয়ে দেয়া হয় সাধারণ মানুষকে। পরে একটি জাল কাগজ দেখিয়ে ওই জায়গা দখলের চেষ্টাও চালান তিনি। তখন স্থানীয়দের তোপের মুখে তার দখল চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ব্যাপক সংঘর্ষ হয় সালাহ উদ্দিন গ্রুপ ও স্থানীয়দের মধ্যে। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষে দুটি মামলা হয়। সালাহ উদ্দিনের পক্ষে সালাহ উদ্দিন কলোনির ইনচার্জ হেনা বেগম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। গত ২৭ মার্চ-২০২২ দুপুরে সালাহ উদ্দিনের লোকজন সাথে নিয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আবারও ওই জায়গায় ভাসমানদের দখল ছেড়ে দিতে মাইকিং করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং থেকে আনন্দবাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার অচল রেল লাইনজুড়ে রয়েছে কয়েক’শ একর জায়গা। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত এসব জায়গা দখলে নিয়েছে এলাকাভিত্তিক ও ভাসমান লোকজন। এসব জায়গা দখলমুক্ত করতে তেমন কোন উদ্যোগ না থাকলেও কলসিদিঘী পকেট গেট সংলগ্ন ৫০ শতক জায়গায় উচ্ছেদে রেল কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার তৎপর হতে দেখা যায়। গত ১ মার্চ-২০২০ সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ওই জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে রেল কর্তৃপক্ষ। এসময় জায়গাটিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও তা বেদখলে রাখা হয়। পরে জায়গাটি দখলে নিতে সালাহ উদ্দিন গ্রুপের সাথে স্থানীয় দখলদারদের সংঘর্ষ হয়। এতে অনেকে আহত হয়। উভয় পক্ষ থেকে দুটি মামলাও হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ি জানান, সালাহ উদ্দিন মূলত একজন দখলবাজ। টাকা দিয়ে রেল কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বারবার একই জায়গায় উচ্ছেদের মাধ্যমে জায়গাটি দখলে নিতে চায়। একটি ভুয়া ইজারার কাগজ দেখিয়ে লোকজনকে সে প্রায় বলে জায়গাটি তিনি ইজারা নিয়েছেন। গত ২৭ মার্চ-২০২২ ইং তারিখে রেলের নিরাপত্তা কর্মীরা সালাহ উদ্দিনের লোকদের সাথে নিয়ে জায়গাটিতে দখল ছেড়ে দিতে মাইকিং করে। এসময় স্থানীয়রা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে গেলে নিরাপত্তা কর্মীরা পালিয়ে যায়।

রেলওয়ের জায়গা দখলে রাখার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘এর জন্য সবাইকে ম্যানেজ করতে হয়। রেল কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হাতে রাখাতে আমাকে উচ্ছেদ করে না। পাশের জায়গাটি আমি কখনো দখলের চেষ্টা করিনি। ওই জায়গাটিতে উচ্ছেদ কেন হয়েছে এটি কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। অনেক তদবির করে আমার জায়গাটি আমি রক্ষা করেছি।’ এসময় প্রতিবেদকের কাছে তিনি নিজেকে চসিকের ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের বন্ধু ও ব্যবসায়ীক পার্টনার বলে পরিচয়ও দেন।

তবে চসিকের ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন পরিচয় অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সালাহ উদ্দিন নামে কাউকে চিনিনা। এই নামে আমার কোন বন্ধু বা ব্যবসায়ীক পার্টনার নেই। কেউ এমন দাবি করলে তিনি তা ভুল বলেছেন।’

এদিকে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে আনন্দবাজার পর্যন্ত রেলওয়ে কতটুকু জায়গা আছে এবং কোনো ইজারা দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহাবুবুল করিম সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেননি।

এসময় তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে রেলের কিছু জায়গা কয়েকজনকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে ৪০নং ওয়ার্ডএরমধ্যে সালাহ উদ্দিন নামে কেউ নেই। তার সাথে রেল কর্মকর্তাদের সখ্যতার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওখানে আগে যে উচ্ছেদ করা হয়েছে তা একান্তই রেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। আগামীতেও ওখানে আরও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানান তিনি।  

এসএ/