ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান, আতঙ্কিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান, আতঙ্কিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

মাথার ওপর পলেস্তারা আর ঢালাই খন্ড ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা। স্যাঁত স্যাঁতে আর জরাজীর্ণ ভবনে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ভবনের ওপর পলিথিন দেওয়ার পরেও সামান্য বৃষ্টিতেই ঢালাই ধ্বসে পানি পড়ছে শ্রেণী কক্ষে। প্রচন্ড গরম কিংবা মেঘলা আকাশে নেই ফ্যান-লাইট চালানোরও সুবিধা। উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে করুণ চিত্র। যে কোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনার শঙ্কা আর নানা ভোগান্তি নিয়ে স্কুলটিতে সাত দশকের পুরনো ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নানা আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা তো বটেই, শিক্ষকরাও পাঠদানে মনোযোগী হতে পারছেন না। 

১৯৩৪ সালে সহ শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রচীনতম বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালে সরকারি করণ হয়। ৮৫০ জন শিক্ষার্থী ও ৩৩ জন শিক্ষক কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্কুলটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র স্কুলটি। কিন্তু নিরাপদ ভবন সংকটে যে কোনও মহূর্তে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৪ সালে স্কুলটিতে একটি পাকা ভবন এবং পরে আরও একটি সেমি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কয়েক দশক পেরিয়ে যাওয়ায় দুটি ভবনই এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। পাকা ভবনটির পলেস্তারা ও ছাদের ঢালাই খসে খসে পড়ছে। ঢালাই খসে গিয়ে ভেতরের রড বেরিয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি চুয়ে পড়ছে। ভবনে নেই কোনও বৈদ্যুতিক সংযোগ। একই অবস্থা সেমিপাকা ভবনের। সেখানে টিনের চাল ফুটো, স্থানে স্থানে মটকা নেই। চালের আড়া ভেঙে গেছে। স্যাঁত স্যাঁতে দেওয়ালে নেই পলেস্তারা। এমন পরিস্থিতিতে ভবন গুলিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার জন্য উপজেলা কমিটির কাছে আবেদন দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রুতি রায় ও সোমাইয়া আক্তার জানান, আমাদের বিদ্যালয়টি অনেক পুরাতন। শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণী কক্ষ অনেক কম। তাই আমাদের পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজির্ণ ভবণে ক্লাস করতে হচ্ছে। ক্লাস করার সময় পলেস্তারা খসে আমাদের গায়ে ও মাথায় পড়ে। এতে অনেকেই আহত হয়েছে। এই ভবনে ক্লাস করলে যে কোনও সময় আমাদের বড় ধরণের দুরঘর্টনা ঘটতে পারে। তাই জরুরী ভিত্তিতে নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের ক্লাস করতে সুবিধা হবে। একই কথাই জানান ঐ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাধব কুমার জিৎ।
  
সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান,জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালটি কুড়িগ্রাম জেলার ম ধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো ১৯৬০ সালে নির্মান করা হয়েছে। ইতিপূর্বেই ব্যবহারের অনু-উপযোগী। তারপরেও শ্রেণী কক্ষের অভাবে বাধ্য হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসমস্ত ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন এবং যেন সময় বড় ধরণের দুঘর্টনার আশংকা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। 

সহকারি শিক্ষক হোসনে আরা বেবি বলেন, ভবনগুলো দেখতে পাচ্ছেন এগুলো অনেক পুরানো। যেটা পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে ক্লাস নিতে হচ্ছে। যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দৃষ্টি আকর্ষন করছি যেন এই ভবনগুলো দ্রæত ভাল ভবনের আত্তায় নিয়ে আসা।
   
এ বিষয়ে জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার জানান, এটি প্রাচীনতম একটি বিদ্যাপীঠ। এই বিদ্যালয়ে অনেক অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। সে তুলনায় আমাদের শ্রেণীকক্ষ সংকট। তাই পুরাতন জরাজীর্ণ আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে । পুরানো ভবনের নিচে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবস্থান করি এবং অত্যান্ত ঝুঁকির মধ্যে থাকি। কর্তৃপক্ষ যদি বিদ্যালয়ে নতুন করে ভবন নির্মান করে দেয় তাহেলে আমাদের এই সমস্যা সমাধান হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, বিদ্যালয়টির ভবনগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে দ্রুত জানানো হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের থেকে একটি আবেদন ইতিমধ্যে পেয়েছি। যা সংশ্লিষ্ট কাারগরি দপ্তরে মূল্যায়ণের জন্য প্রেরণ করা হয়ছে। তাছাড়াও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মহাদয় ও মাননীয় সংসদ সদস্য পুরাতন ভবনটি পরিদর্শন করে কিছু নিদের্শনা দিয়ে গেছেন। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এসএ/