কালের সাক্ষী মৌলভীবাজারের পৃত্থিমপাশা নবাব বাড়ি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কালের সাক্ষী মৌলভীবাজারের পৃত্থিমপাশা নবাব বাড়ি

জমিদারবাড়ি বলতে ভাঙাচোরা পলেস্তারা খসে যাওয়া দেয়ালের কথা মনে এলেও পৃত্থিমপাশা তার চেয়ে আলাদা। ৩৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি আজও সাজানো-গোছানো। বাড়িতে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে রয়েছে বিশাল এক দিঘি। প্রায় ৩০০ বছর বয়সী বাড়িটির আসবাবপত্র, মসজিদের ফুলেল নকশা, ইমামবাড়া, দিঘি মানুষকে আকৃষ্ট করে।

ইমামবাড়াই বেশি আকর্ষণীয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক নিয়োগ করা আছে। আলী আমজাদ খানের উত্তরসূরিরাই বাড়িটি দেখাশোনা করেন। 

মোগল সম্রাট আকবরের সময়কালে ইরান থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে আসেন সাকি সালামত খান। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যেই তাঁর ছেলে ইসমাইল খান পৃত্থিমপাশায় আসেন। ইসমাইল খানের নামে পৃত্থিমপাশার জমিদারবাড়ির দিঘির নাম রাখা হয়। ইসমাইল খানের ছেলের নাম শামসুদ্দিন খান। শামসুদ্দিন খানের ছেলে রবি খান। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য জমি দান করে রবিরবাজার হাট প্রতিষ্ঠা করেন রবি খান। তাঁর ছেলে আলী আহমদ খান সিলেটের কাজি (বিচারক)  ছিলেন। একটি ঘরের চূড়ায় বিরাটাকায় এ ঘড়িটি স্থাপন করা হয়েছে। ১৮৭৪ সালে সিলেটের কিন ব্রিজের ডান পাশে সুরমা নদীর তীরে ঘড়িঘরটি নির্মাণ করেন আলী আহমদ খান। নাম রাখেন ছেলে আলী আমজাদের নামে। পরে পিতার মৃত্যুর পর স্থাপনাটির নির্মাণকাজ পূর্ণ করেন আলী আমজাদ খান। এটি এখন সিলেট শহরের একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা। নারী শিক্ষার প্রসারে মৌলভীবাজারে ১৯০৫ সালে ‘মৌলভীবাজার আলী আমজাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন নবাব আলী আমজাদ খান। এ ছাড়া কুলাউড়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয় আলী আমজাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

আমজাদ খানের দুই উত্তরাধিকারী হলেন—আলী হায়দার খান ও  আলী আজগর খান। তাঁদের আমলেই বাড়িটি দুই ভাগ হয়ে যায়। আলী হায়দার খানের দুই পুত্রআলী ছফদর খান ওরফে রাজা সাহেব ও আলী সারওয়ার খান ওরফে ‘চুন্নু নবাব’।   আলী ছফদর খান ভাসানী ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। অন্যজন আলী সারওয়ার খান ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালের উপনির্বাচনে কুলাউড়া আসনের প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পৃত্থিমপাশার ইমামবাড়া

পৃত্থিমপাশার জমিদারবাড়ির সদস্যরা শিয়া মতাবলম্বী। নবাব আলী আমজাদ খান ইমামবাড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন। মহররমের দিন ইমামবাড়াকে কেন্দ্র করে কারবালার কাহিনি বর্ণনা, শোক মিছিল ও মাতম চলে। এখনো পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি থেকে  মহররম উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে।

বাড়িতে অতিথি হয়েছিলেন  

অনেক নামকরা লোক পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ির আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ১৯৫১ সালে ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভী অন্যতম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পূর্ব পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিম উদ্দিন প্রমুখ। ত্রিপুরার মহারাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরও এ বাড়িতে আতিথ্য নিয়েছিলেন।

উত্তরসূরিরা

জমিদারদের বর্তমান উত্তরসূরি সাবেক সংসদ সদস্য আলী আব্বাস খান এবং তাঁরই চাচাতো ভাই আলী ওয়াজেদ খান।   আলী ওয়াজেদ খান বলেন, ‘জমিদারি আমলে  রাজস্ব আসত ১১ লাখ টাকা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী বাড়িটি ধ্বংসের চেষ্টা চালায়।

পরিবারের সদস্যদের অনেকে ইংল্যান্ড-আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির ফলে ১০০ বিঘা জমি বাদে বাকি সব সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ’ আলী আব্বাস খান বলেন, ‘জমিদারি চলে গেলেও আগের মতোই মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ এখনো আমাদের অনেক ভালোবাসে। আগের মতোই সম্মান করে। ’

এসএ/