স্ত্রীসহ দুই মেয়েকে হত্যার কারণ জানালেন চিকিৎসক


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


স্ত্রীসহ দুই মেয়েকে হত্যার কারণ জানালেন চিকিৎসক

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে দন্ত চিকিৎসক আসাদুজ্জামান রুবেল। সম্প্রতি ঋণগ্রস্ত হয়ে হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। আর সেই হতাশা থেকেই ঘুমন্ত স্ত্রী আর দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে ও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে রুবেল (৪০) স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

নিহতরা হলেন, রুবেলের স্ত্রী লাভলী আক্তার (৩৫), বড় মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছোঁয়া আক্তার (১৫) ও ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কথা আক্তার (১২)।

জবানবন্দিতে রুবেল জানান, ‌‘২০০০ সালে ভালবেসে রুবেল ও লাভলী বিবাহ করেন। বেশ সুখেই কাটছিল তাদের দিন। প্রায় ১৫ বছর আগে রুবেল তার বাবার বাড়ি থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে একই গ্রামে শ্বশুরের জামিতে টিনের ছাপড়া ঘরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় নানান ব্যবসা করে লোকসান দেন। এর পর দন্ত চিকিৎসার ওপর কোর্স করে পার্শ্ববর্তী বানিয়াজুরী বাসষ্ট্যান্ডে একটি দোকান নেন। দীর্ঘদিন সেখানে দন্ত চিকিৎসা করেন। ঈদের আগে একটি রোগীকে ভুল চিকিৎসা করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন তাকে দেড়লাখ টাকা জরিমান করেন এবং ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এরপর থেকে রুবেল অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। জরিমানার ওই টাকা রোববার পরিশোধ করার কথা ছিল। এ নিয়ে শনিবার রাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয়। শেষ রাতের দিকে তাদের হত্যা করে তিনি বাড়ি থেকে বের হয় আত্মহত্যার চেষ্টার করেন।’

স্বজনরা জানান, রুবেল তার বড় মেয়েকে বেশি ভালোবাসতেন। অভাব অনটনের সংসারেও কোনো কিছুর অভাব তাকে বুঝতে দেননি। দন্ত চিকিৎসাও বড় মেয়েকে শেখাচ্ছিলেন। ছোয়া এবার বানিয়াজুরী সরকারী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক শাখার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। লেখাপড়ায় বেশ ভালো ছিল বলে শিক্ষকরাও তাকে আদর করতেন। ছোট মেয়ে কথাও লেখাপড়ার বেশ ভালো ছিল। চঞ্চল প্রকৃতির মেয়েটি তার হাসিমাখা কথায় আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীকে মাতিয়ে রাখতেন।

হত্যা সম্পর্কে রুবেল জানান, ‘ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন লাভলী আক্তার ও দুই মেয়ে কথা ও ছোয়া। ভোর রাতে প্রথমে লাভলী আক্তারকে মাথায় আঘাত করে কার্যত অচেতন করে ফেলেন। পরে মুখে বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘরে থাকা ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে ফেলেন। এরপর প্রথমে ছোট মেয়েকে এবং পরে বড় মেয়েকে একই কায়দায় গলাকেটে হত্যা করেন। পরে তিনি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে বাসের নিচে পড়ে আত্মত্যার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।’

লাভলীর মা হালিমা বেগম বলেন, ‘সকালে প্রাতঃভ্রমণ শেষে মেয়ের বাড়িতে যাই। এসময় ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের বাইরের শেকল খুলে দেখা যায় রক্ত। পরে দেখি খাটে পড়ে আছে তার মেয়ে লাবনী ও দুই নাতনির রক্তাক্ত মরদেহ। তিনি রুবেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।’

ঘিওর থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, ‘রোববার বিকেলে রুবেলকে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই ঘটনায় লাভলীর বাবা সাইজ উদ্দিন বাদী হয়ে ঘিওর থানায় মামলা করেছেন। ময়না তদন্ত শেষে তিনজনের মরদেহই দাফন করা হয়েছে।’

এসএ/