পানিতে ভাসছে সিলেট


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পানিতে ভাসছে সিলেট

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে এই পর্যন্ত চলতি বন্যায় ৪ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। সিলেট নগরী থেকে শুরু করে প্রায় সব ক'টি উপজেলা এখন বন্যর পানিতে ভাসছে। কয়েকটি উপজেলায় উপজেলা পরিষদও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত ১২৯ মেট্টিকটন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। সামনে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ত্রানের চাহিদা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির জরুরী সভা করা হয়েছে। বন্যার পানি বাড়ার কারনে বিভাগীয় শহর সিলেট সহ জেলার প্রায় সকল উপজেলা কার্যত পানিতে ভাসছে।

জানা যায়, গত কয়েকদিনের বৃস্টি আর উজানী ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ।

মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার প্রায় দেড় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিও। নদীর পানি উপচে সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার প্লাবিত এলাকার পানি আরও বেড়েছে। নগরের উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ সিলেট নগরীর উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অভিজাত এই এলাকার প্রধান সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের দোকানপাট ও এলাকার বাসাবাড়িতেও। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।

উপশহরের বি ব্লকের ব্যবসায়ী আজমল আলী বলেন, দোকানের ভেতরে হাঁটুর ওপরে পানি। কাল রাতেও পানি ছিল না। সকালে এসে দেখি দোকানে পানি ঢুকে সব মালপত্র ভিজে গেছে।

এই এলাকার বাসিন্দা রোম্মান আহমদ বলেন, প্রতি মিনিটে পানি বাড়ছে। এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে দেখিনি। আমাদের ঘরের নিচতলা তলিয়ে গেছে। আমরা দোতলায় আশ্রয় নিয়েছি।

সকালে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হওয়া মো. কামরুজ্জামান বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে দেখি চারদিকে পানি। সড়ক ডুবে যাওয়ায় কোনো যানবাহন চলছে না। তাই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতে পারিনি।

নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া ও নগরে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে পানিতে নগর তলিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন করা প্রয়োজন। না হলে প্রতি বছরই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে মানুষকে।

এদিকে, বন্যাকবলিতদের জন্য নগরের কিশোরী মোহন ও মাছিমপুর বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

অপর দিকে, বন্যায় আগেই প্লাবিত হয়ে পড়া পাঁচ উপজেলা সদর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, উজানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এই বিষয়টা আতঙ্কের। এই সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভবন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে চলমান বন্যায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ আরো একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে, চলমান বন্যার পরিস্থিতি জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির জরুরী সভা করা হয়েছে। সভায় জেলার প্রায় সব'কটি উপজেলার চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ ভয়াবহ বন্যার পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। তারা বলছেন, আগামী কয়েকদিনে পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে।

জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন-সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যন আব্দুল মোমিন চৌধুরী, বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম নুনু, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার আলম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান, বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক নুর, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত আজমেরী হক,  বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান, বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার, ওসমানীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূসরাত লায়লা নীরা, জৈন্তাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-বশিরুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বোরহান কবির, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম।

সভায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সকল সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কর্মস্থলে থেকে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবর রহমান সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আশ্র‍য়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

এসএ/