বিদেশ যাচ্ছে সুমাইয়ার তৈরি আচার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বিদেশ যাচ্ছে সুমাইয়ার তৈরি আচার

গাজীপুরের শ্রীপুরের সুমাইয়া আক্তার নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তার তৈরি আচার এখন বিদেশে যাচ্ছে। গত দুই বছরে বিভিন্ন প্রবাসীর জনদের মাধ্যমে তার আচার গেছে সিঙ্গাপুর, লন্ডন, আরব আমিরাত, কাতার ও সৌদি আরব।

শৈশবেই আচারের প্রতি বিশেষ লোভ ছিল তার। সে থেকেই আচার যেন জীবনের একটি অনুসঙ্গ হিসেবেই থেকেছে তার সাথে। যখন বয়সের পূর্ণতা পেল তখনই আচার বানাতে শুরু করেন। লেখাপড়ার সময় বাদ দিয়ে বাকীসময়গুলো ছিল আচার তৈরীর প্রচেষ্টা। এলাকায় বিভিন্ন বাড়ী ঘুরে আচার তৈরীর উপকরণ মৌসুমী ফল সংগ্রহ পরে ইউটিউবের সহায়তা ও নিজের প্রচেষ্টা সব মিলিয়ে একটি সময় আচার জ্ঞান তার আয়ত্বে এসে যায় কয়েক বছরেই। এর পরই যেন আচার নিয়ে ব্যবসার প্ল্যানটা অন্তরে গাঁথতে থাকেন তিনি। শুরু করেন নানা ধরনের আচার তৈরী। পরে অনলাইনে নিজের তৈরীর আচার সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্লাটফর্মের মানুষকে অবহিত করেন। সেই শুরু ৬বছর পূর্বে। আর এখন তার মুখরোচক আচার যাচ্ছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে। আসছে আচারের ফরমাইশ। নিজের লেখাপড়ার ফাঁকে এই আচারই এখন তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার প্রেরণা যোগাচ্ছে।  সুমাইয়া আক্তারের ভাষ্য, প্রতিটি মানুষেরই আচারের প্রতি বিশেষ লোভ রয়েছে। তারও ছিল। তবে তা প্রচন্ড রুপ পায় যখন আচার তৈরী করাটা আয়ত্বে আসে। এর পর থেকেই তার ধ্যান জ্ঞান সবই এই আচারকে নিয়েই। লেখাপড়ার সময়টুকু বাদ দিলে বাকী সময় তার আচার তৈরীর পেছনেই কেটে যায়। দেশীয় মৌসুমী ফলের বিভিন্ন আচার তৈরী ছাড়াও গরুর মাংসের আচার ও শুটকীর বালাচাও তৈরী হয় সোমাইয়ার হাতে। নিরাপদ ও মুখরোচক হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তারআচারের সুখ্যাতি। বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে তার সুটকির বালাচাওয়ের ব্যাপক চাহিদা তৈরী হয়েছে। গত দুই বছরে বিভিন্ন প্রবাসীর জনদের মাধ্যমে তার আচার গেছে সিঙ্গাপুর, লন্ডন, আরব আমিরাত, কাতার ও সৌদি আরবে। এই সময়কালে দেশ ও দেশের বাহির থেকে প্রচুর ফরমায়েশ থাকলেও বৃহৎ পরিসরে তৈরী করতে না পারায় তিনি অনেককেই দিতে পাচ্ছেন না। তবে লেখাপড়া শেষ করে তিনি এইআচার নিয়েই বৃহৎ পরিসরে কাজ করবেন। 

তিনি আরো বলেন,আমাদের দেশ ছাড়াও দেশের বাহিরে এই আচার নিয়ে দারুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এখন তিনি এলাকার বিভিন্ন নারী ও কিশোরীদের এই আচার তৈরীর প্রশিক্ষণ দেন। তার লক্ষ তার আশপাশে যারা রয়েছেন তারাও যেন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। ছোট পরিসরে আচার তৈরী করে এখন প্রতিমাসে তার আয় হচ্ছে ৮/১০হাজার টাকা। 

সুমাইয়া আক্তারের জন্ম কৃষক বাবার পরিবারে। ছোটকালেই অভাবের সাথে সখ্যতা ছিল সুমাইয়া। শিশুসময় যখন বিদ্যালয়ে যেতেনতখন থেকেই উচ্চশিক্ষা নেশাটা ঝোকে ধরে তার। নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে নানারবাড়ী থেকেই শুরু হয় লেখাপড়া। লেখাপড়ার ফাঁকে আচার তৈরী ও বিক্রি করে এখন নিজের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে প্রতিমাসেই নিজের পরিবারের কাছেও কিছু টাকা তুলে দিতে পারছেন সুমাইয়া। সুমাইয়া আক্তার ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার তললী গ্রামের জালাল মীরের মেয়ে। দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়। ছোটকালেই নানার বাড়ী গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদে চলে আসেন। নানা বাড়ী থেকেই কাওরাইদ কেএন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, গয়েশপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পরে ভর্তি হন। শ্রীপুর বীরমুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজে। এবার তিনি সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

সুমাইয়া মামা কাওরাইদ গ্রামের সিরাজুল হক বলেন, তার ভাগ্নির তৈরী করা আচার মুখরোচক হওয়ায় অনেকেই আচার নিতে বাড়ীতে ভীর করেন। লেখাপড়ার ফাকে তার শ্রম ও অধ্যবসায় তাকে উদ্যোক্তা হিসেব গড়ে তুলছে। ছাত্রাবস্থায় সে লেখাপড়ার ফাকে আচার তৈরী করে নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও অর্থের যোগান দিচ্ছে। সে তার সমবয়সীদের রোল মডেল।

এসএ/