নির্মাণের ৩ মাসের মধ্যেই ডেবে গেছে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে চলছে পারাপার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নির্মাণের ৩ মাসের মধ্যেই ডেবে গেছে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে চলছে পারাপার

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই ডেবে গেছে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতু। গত তিন বছরে প্রশাসন ও দুদুক একাধিকবার ঘটনাস্থলে পরির্দশন ও তদন্তের কথা বলা হলেও গ্রামের মানুষের ভোগান্তির সমাধান হয়নি। মেলেনি প্রতিকার। ফলে নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে ড্রামের ভেলায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে মানুষ। প্রশাসন বলছে বড় বাজেট না থাকায় নতুন করে ব্রীজ নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরাম গ্রামে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় সব বয়সী মানুষজনের ভোগান্তির চিত্র। দড়ি দিয়ে ড্রামের ভেলা টেনে খাল পারাপার করছে তারা। এখন পানি কম থাকায় পারাপারে সমস্যা কম হলেও বর্ষা মৌসুমে ভীষণ ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। তখন স্কুল-কলেজগামি শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে পারাপার করতে হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষিকাজে জড়িত মানুষ এবং গুরুতর রোগীদের এসময় ভীষণ সমস্যায় পড়তে হয়। নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই সেতুটি ডেবে যাওয়ায় এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয় গ্রামবাসী। 

বড় ধরনের অনিয়ম হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা করা হয়নি। সাজা হয়নি দায়ী ব্যক্তিদের। ফলে হতাশ এই এলাকার মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খালের উপর দিয়ে আবাসনে যাওয়ার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ৩০লক্ষ ৭৭হাজার ৬৫৬টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৪০ফুট দৈর্ঘের সেতুটি। ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাজটির তদারকি করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটিএম দেলোয়ার হোসেন টিটু সেতুটি নির্মাণ করেন। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মাত্র দুই তিন মাসের মধ্যে সেতুটি ডেবে গিয়ে উল্টে যায়। পরে বন্যার পানির চাপে সেতুর সংযোগ সড়কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। তিন বছর ধরে দেনদরবার করেও মেলেনি সমাধান। ফলে নিজেদের উদ্যোগে ড্রামের ভেলা করে ঝুঁকির মধ্যে পারাপার করছে তারা। এই খালে টেকসই ব্রীজ নির্মাণের দাবী এলাকাবাসীর।

স্থানীয় অধিবাসী কামরুল ইসলাম, ‌‘হাসান আলী ও মজিবর রহমান জানান, নিম্ন মানের কাজের ফলে ব্রীজটি ডেবে  গেছে। অথচ অফিস বলছে বন্যায় ভেঙে গেছে।’

ওই এলাকার শিক্ষার্থী নুশরাত আক্তার, হামিদা ও জান্নাতী খাতুন জানান, ‘আমরা অনেক আশা নিয়ে ব্রীজটি দিয়ে পরাপার করবো বলে ভেবেছি কিন্তু সব আনন্দ ম্লান হয়ে গেল। এখন আবার আমাদেরকে কষ্ট করে খাল পারাপার করতে হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও গ্রামবাসীর কষ্ট দূর করার জন্য কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’

এ ব্যাপারে দায় এড়িয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত জনবাণীকে জানান, ‘বন্যার কারণে ব্রীজটি ভেঙ্গে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও দুদক থেকে তদন্ত করা হয়েছে। ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তীতে বড় ধরণের কোন প্রকল্প প্রস্তাবনা নেয়া হলে আমরা উক্ত নির্দশনা অনুযায়ী সেখানে পদক্ষেপ নিব।’

এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জনবাণীকে জানান, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে বাঁশের সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ব্রীজ নির্মানের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

এসএ/