গণধর্ষণের নাটক সাজিয়ে পুলিশকে হয়রানি, অতঃপর...


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


গণধর্ষণের নাটক সাজিয়ে পুলিশকে হয়রানি, অতঃপর...

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী মেয়ে গণধর্ষের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন এক বাবা। ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে মেয়েকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসক, পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের জানানো হয় গভীর রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বাড়ির পাশের বাঁশ বাগানে তার বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে।

শুক্রবার (২৭ মে) রাত ২ টার দিকে সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের নতুন ভান্ডারদোহা গ্রামে এঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। গ্রামজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

অভিযুক্ত তিনজন সমবয়সী না হওয়া এবং ভুক্তভোগী কিশোরী স্বাভাবিক থাকায় সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিনের মনে খটকা লাগে। পরে তার বাবার দেয়া অভিযুক্তদের নাম সংগ্রহ করে খোঁজ নেন। প্রতিবেশী ও কিশোরীর মায়ের সাথে কথা বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে গণধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। গভীর রাতে প্রতিবেশী ফজা নামে যুবক ওই কিশোরীর ঘরে ঢুকেছিল। কিশোরীর চিৎকারে তার মা ছুটে আসলে ওই যুবক ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। পরে ওই কিশোরীর বাবা ভুল তথ্য দেয়ার জন্য সংবাদকর্মীদের নিকট ক্ষমা চান। 

এঘটনার পর সকাল ১১ টার দিকে সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফজাকে (১৮) আটক করে। ফজা ওই গ্রামের হায়াত আলীর ছেলে।  দুপুরে কিশোরীর বাবা বাদি হয়ে ফজাকে একমাত্র আসামী করে সদর থানায় একটি ধর্ষন চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ফজাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। বিকেলে আদালতে সোপর্দ করলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কিশোরীর মা ফরিদা পারভিন বলেন, দুই বোন এক ঘরে ঘুমিয়েছিল। রাত ২ টা দিকে বড় মেয়ের গোংরানির শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে মেয়ের ঘরে ঢুকতেই প্রতিবেশি ফজা আমাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর সাথে সাথে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায় আমার স্বামী। কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি। মেয়ের বাবা হয়তো বুঝতে পারেনি। তাই হইতো এমন কথা বলেছে। 

এদিকে, ভোরে মেয়েকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানে সংবাদকর্মীদের জানায়, আমার মেয়ে কথা বলতে পারেনা। রাতে ছোট বোনের সাথে ঘুমিয়ে ছিল৷ রাত ২ টার দিকে মেয়ের গোংরানির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়৷ পরে দেখি ঘরের পাশে বাঁশ বাগানের মধ্যে প্রতিবেশি হায়াত আলীর ছেলে ফজা সহ তিনজন আমার মেয়েকে মুখ চেপে নির্যাতন করছে। এসময় অভিযুক্ত ফজা আমাকে দেখতে পেয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে সবাই পালিয়ে যায়। পরে আমার মেয়েকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। এরপরই  সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিনের বিচক্ষণতায় মূল ঘটনা বেরিয়ে আসে৷ 

দুপুরে কিশোরীর বাবা সংবাদকর্মীদের নিকট ক্ষমা চেয়ে বলেন, প্রতিবেশি ফজাসহ তিনজন আমার বাড়ির পিছনে মাদক সেবন করে। তাদের নিষেধ করলেও শোনেনা। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায়ও হয়েছে। রাতে আমার মেয়ের ঘরে ফজাকে দেখে মনে করেছিলাম তার দুই সহযোগি আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে। যাচাই-বাছাই না করেই আমি বলেছি এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খালিদ হাসান বলেন, ভোর ৫ টা ৫৫ মিনিটের দিকে ধর্ষণের দাবি করে এক কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে তার বাবা। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেছি। আইনি পদক্ষেপ নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিশোরীর স্বাস্থ্য পরিক্ষা করবে।

চুয়াডাঙ্গায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, কিশোরীর বাবা যে তিনজনের নাম বলেছিল তাদের বয়স অনেক কমবেশি। কিশোরীর স্বাভাবিক ছিল। আমার পূর্ব অভিজ্ঞতায় গণধর্ষণের ঘটনা বলে মনে হয়নি। পরে প্রতিবেশী, কিশোরীর মায়ের সাথে কথা বলে আসল ঘটনা বের করতে সক্ষম হয়। গণধর্ষণের মামলা থেকে রক্ষা পাই তারা৷  মূলত প্রতিবেশী ফজা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরীর ঘরে ঢুকেছিল। পরে কিশোরীর মা দেখে ফেলে। 

এঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদি হয়ে ধর্ষণচেষ্টা মামলা দায়ের করেছে। আসামীকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। 

এসএ/