নারী ধর্ষণ ও দুই শিশুকে হত্যা, বাচ্চুর যাবজ্জীবন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নারী ধর্ষণ ও দুই শিশুকে হত্যা, বাচ্চুর যাবজ্জীবন

বাগেরহাটে এক নারীকে ধর্ষণ এবং দুই শিশুকে হত্যার দায়ে বাচ্চু মৃধা (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। সেই সাথে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড । 

সোমবার (৩০ মে) দুপুরে বাগেরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা দায়রা জজ মো. নূরে আলম এই রায় ঘোষণা করেন। আসামীদের উপস্থিতি আদালতের বিচারক এই রায় ঘোষণা করেন।

একই মামলার অপর আসামী খোকন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেয় আদালত। তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলার সমাদ্দার গ্রামের আছমত খানের ছেলে। তবে এই মামলার বাদী মো. লোকমান হোসেন ওরফে বাবু এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি রায়ের কপি হাতে পেলে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বাচ্চু মৃধা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পায়লাতলা গ্রামের প্রয়াত বারেব মৃধার ছেলে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রণজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পায়লাতলা গ্রামের মো. লোকমান হোসেন ওরফে বাবুর সাথে প্রতিবেশি বাচ্চু মৃধার আগে থেকেই জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভোর পাঁচটার দিকে বাচ্চু মৃধা লোকমানের বাড়িতে ঢুকে তার বৃদ্ধ মা রওশনারা বেগমকে প্রথমে মুখ চেপে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় লোকমানের নয় বছর বয়সী বড় ছেলে মিরাজুল এবং সাত বছর বয়সী ছোট ছেলে মো. ইমন ওরফে রিয়াজুল ইসলাম তাদের দাদীকে রক্ষা করতে গেলে আসামী বাচ্চু তাদেরকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তাদের মরদেহ পাশ্ববর্তি পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পরদিন নিহত ছেলেদের বাবা মো. লোকমান হোসেন বাদী হয়ে বাচ্চু মৃধার বিরুদ্ধে মোরেলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিছুদিন পর আসামী বাচ্চু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বাগেরহাট কার্যালয়ের তৎকালীন পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১০ জুলাই বাচ্চু মৃধা ও খোকন খানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালতের বিচারক উবয়পক্ষের ২০ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামী বাচ্চু মৃধার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন এবং একই সাথে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এই মামলার অপর আসামী খোকন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেন বিচারক।

মামলার বাদী মো. লোকমান হোসেন ওরফে বাবু বলেন, ‌‘আমি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমার মাকে ধর্ষণ এবং দুটি সন্তানকে হত্যা করেছে এই আসামীরা। তাদের দুজনেরই ফাঁসির আদেশ হবে এটা আশা করেছিলাম। সেখানে বিচারক একজনকে যাবজ্জীবন আরেকজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। আমি আমি দুটি সন্তান হারিয়েছি। আমি এই রায়ে খুশি হতে পারিনি। মামলার রায়ের কপি হাতে পেলে উচ্চ আদালতে যাব।’

আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী শেখ মনিরুজ্জামান।

এসএ/