২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু, দোকান বিক্রির হিড়িক
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেদিন থেকেই সেতু দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াত ভোগান্তি ও খরচ কমবে। দ্বার উন্মোচন হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনার। তবে এই সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয়তা কমবে পদ্মার তীরের নৌঘাটগুলোর। বদলে যাবে ঘাটের চিত্র। ঘাটগুলোতে দেখা মিলবে না যাত্রী ও যানবাহনের উপচে পড়া ভিড়। এতে শিমুলিয়া, পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া, বাংলাবাজার, মাঝিরকান্দি ঘাটসহ অন্যান্য নৌঘাটে যাত্রী ও যানবাহনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মাদারীপুর বাংলাবাজার ঘাট কেন্দ্রিক প্রায় ৪০টি হোটেল ব্যবসায়ী এবং হাজারেরও বেশি কর্মজীবী মানুষ শঙ্কা ও অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন। তাদের দুশ্চিন্তার একমাত্র কারণ কিছু দিন পর থেকে ঘাটে মানুষ কমবে। এতে ব্যবসা একেবারেই কমে যাবে। এদিকে, অনেকে পুরোনো এই পেশা বদলে নতুন পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকে আবার কম দামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
শনিবার সরেজমিনে ঘুরে বাংলাবাজার ঘাটের কয়েকজন হোটেলে ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তারা নিজেদের শঙ্কার কথা জানান। একইসঙ্গে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দ্রুত পদ্মার পাড়ে পর্যটন পার্কসহ মানুষের হাঁটা ও বসার ব্যবস্থা করাসহ একটি পর্যটন এলাকা করার দাবি জানান। বাংলাবাজার লঞ্চ, ফেরি ও স্পিড বোট ঘাট ঘুরে জানা গেছে, সেতু উদ্বোধনের পর কোলাহলপূর্ণ এই ঘাট হয়ে যাবে সুনসান। চিরচেনা রূপে থাকবে না ঘাটটি।
ঘাটের তিন নম্বর ফেরি ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী আবদুর রব হাওলাদার জনবাণীকে বলেন, “দীর্ঘদিন পর আমাগো স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এর থেকে খুশির আর কী হতে পারে। তবে আমি ১৫ বছর ধরে কাওরাকান্দি থেকে হোটেল ব্যবসা শুরু করে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের পরে বাংলাবাজার ঘাটে এ ব্যবসায় ছিলাম। গত দেড় বছর আগে এই ঘরটি দুই লাখ টাকা দিয়ে বানাইয়া হোটেল চালিয়েছি। হোটেলটি বিক্রি করে অন্য পেশায় চলে যাবো ভাবছি। আজ একজন এসে ৬০ হাজার টাকা কয়। তবে আমার পোলায় তারে ৮০ হাজার টাকা বলে দিছে।”
মা-বাবার দোয়া হোটেলের মালিক রিফাত কবিরাজ জনবাণীকে বলেন, “আমার বাড়ি ঘাট এলাকায়। বাড়ি থেকে ২/৩ মিনিট হাঁটলেই ঘাট। এই ঘাটে লঞ্চ ও ফেরি ঘাট কেন্দ্রিক অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অনেক লোকজন দিন রাইত এইহান দিয়ে পার হইতো। কোনও কোনও দিন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করছি। এখন হোটেলটি বন্ধ করার চিন্তা করছি। ইতিমধ্যেই হোটেলের ছয় কর্মচারীর মধ্যে তিন জনকে ছাঁটাই করেছি। কি করবো বলেন? ওদের তো আর বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে পারি না। এছাড়াও আমার আশপাশের অনেকই দোকান বন্ধ করে দিছে। যারা আছেন তারা ১০ বার দিনের মধ্যে চলে যাবে শুনতেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সরকারের কাছে আবেদন করি, তারা যেন এই ঘাটগুলো পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে। তাহলে অনেক লোক আসবে। তারা এলে এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টের ব্যবসা সচল থাকবে। আমরাও ভালোভাবেই বাঁচতে পারবো।”
বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, এই ঘাটে বর্তমানে ৮৭টি লঞ্চ, ১২৫টি স্পিড বোট চলছে। এসব নৌযানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পার হচ্ছেন। এই যাত্রীদের ওপর নির্ভর করেই বাংলাবাজার ঘাটে ও তার আশপাশে প্রায় ৪০টির মতো হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান ছাড়াও পান, সিগারেট, ঝালমুড়ি, বাদাম, ছোলা, আচার, সেদ্ধ ডিম, শিঙাড়া, চানাচুর নারকেলচিড়া, শসা, দইসহ নানা রকম মুখরোচক খাবারের ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা রয়েছেন প্রায় এক হাজারের বেশি। যাত্রী না থাকলে এসব দোকান ও বিক্রেতাও থাকবে না।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক সামসুল আবেদীন জনবাণীকে বলেন, “সেতু চালু হলে ফেরি চলাচল বন্ধ হবে কি-না এখনও এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
বিআইডব্লিউটিএ’র বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন জনবাণীকে জানান, “এই নৌপথে বর্তমানে ৮৭টি লঞ্চ ও ১২৫টি স্পিড বোট চলাচল করছে। পদ্মা সেতু চালু হলেও ঘাট চালু থাকবে। যাত্রী না থাকলে লঞ্চ চলাচল করবে না। তবে ঘাট বন্ধ হবে কি-না এখনও এমন সিদ্ধান্ত হয়নি।”
এসএ/