মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও টাকা পাঠান অগ্নিকাণ্ডের লাইভ করা অলিউর
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত তরুণ শ্রমিক অলিউর রহমান মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও বিকাশের মাধ্যমে স্বজনদের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন।
অলিউর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে লাশ আনতে যান তার বাবা আশিক আলী। নিহত অলিউর রহমানের (২৩) বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলি গ্রামে। চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে যাওয়ার পথে রবিবার (৫ জুন) সন্ধ্যায় অলিউরের বাবা আশিক আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথা জানান।
নিহত বাবা আশিকের বাবা দিনমজুর আলী বলেন, “আমার চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে অলিউর সবার বড়। তাঁকে আদর করে নয়ন নামে ডাকতেন তাঁরা। কাজের সন্ধানে বছরখানেক আগে অলিউর পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে সীতাকুণ্ডে চলে যান। পরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজ নেন। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পেতেন। বাড়িতে পাঁচ-সাত হাজার টাকা পাঠাতেন।”
তিনি বলেন, “টাকা তোলার পর নয়নরে ফোন দিছি। তার শরীর-স্বাস্থ্যের খবর নিছি। কইছে, বাবা আমি ভালা আছি। বাড়ির সবার খবর নিছে। রাইত পোহাইল না এর আগেউ ছেলেটা আমরারে ফাঁকি দিয়া চলি গেল।”
শনিবার (৪ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থানীয় গারদ বাজারে একটি দোকানে বিকাশে পাঁচ হাজার টাকা পাঠান অলিউর। ওই টাকা দিয়ে চাল, ডাল, মসলাসহ কিছু জিনিস কিনে বাড়িতে ফেরেন অলিউরের বাবা আশিক আলী।
অলিউরের বাবা বলেন, “সেলিম আহমেদ নামের আমার এলাকার এক বাসিন্দা ঢাকায় সাংবাদিকতা করেন। রবিবার সকাল আটটার দিকে প্রথমে তিনিই মুঠোফোনে অলিউরের মৃত্যুর খবর জানান। এরপর টেলিভিশনে দুর্ঘটনার খবর শোনা যায়। এর কিছু সময় পর রুয়েল নামের অলিউরের এক সহকর্মী মুঠোফোনে জানান, অলিউরের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। সেই লাশ আনতেই চট্টগ্রামের পথে রওনা দিয়েছেন তিনি।”
শনিবার ৪ জুন ২০২২ইং, রাত পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন আগুন থামাতে। বড় এ অগ্নিকাণ্ডের খবর পৌঁছে দিতে অনেককেই তখন দেখা যায় ভিডিও ও ছবি ধারণ করতে। তাঁদেরই একজন ডিপোর শ্রমিক অলিউর রহমান। তিনি দীর্ঘ সময় ঘটনাস্থলের অনেকটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। কিছু সময় কথা বলছিলেন আবার কিছু সময় আগুন নেভানোর দৃশ্য দেখাচ্ছিলেন। তাঁর লাইভের ৪০ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের মাথায় ডিপোর কনটেইনারগুলোতে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর মুঠোফোনের ক্যামেরায় সবকিছু অন্ধকার। কেবল শোনা যাচ্ছিল মানুষের আর্তনাদ, ওই বিস্ফোরণে প্রাণ হারান অলিউর রহমান।
এসএ/