২৮ বছরেও গড়ে ওঠেনি মাদ্রাসার ভবন, গাছের নিচে চলছে পাঠদান


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


২৮ বছরেও গড়ে ওঠেনি মাদ্রাসার ভবন, গাছের নিচে চলছে পাঠদান

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা হাদিকাতুল উলুম বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় ক্লাস রুমের অভাবে অনেক কষ্টে গাছ তলায় বসে ক্লাস করতে হয় শীক্ষার্থীদের। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৮ বছর পার হতে যাচ্ছে কিন্তু আজও সেখানে সরকারি ভাবে গড়ে উঠেনি কোন ভবন। মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ এলাকাবাসি সরকার বরাদ্ধের একটি ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। 

কার্পাসডাঙ্গা কবরস্হান মোড়ে ১৯৯৪ সালে কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তি অত্যান্ত মনোরম পরিবেশে একটি বালিকা মাদ্রাসা স্হাপন করেন। যার নাম করণ করেন ‘কার্পাসডাঙ্গা হাদিকাতুল উলুম বালিকা দাখিল মাদ্রাসা’। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আলো ছড়াতে থাকে। প্রায় প্রতি শিক্ষাবর্ষে দৃষ্টিনন্দন ফলাফল অর্জন করে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়। ফলে অল্পদিনেই অশানুরুপ শিক্ষার্থী পাই মাদ্রাসাটি। বর্তমানে ১ম থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ৪২৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ জন। ১৩২ শতাংশ জমির উপর গড়ে উঠা মাদ্রাসায় এখনো শোভা পাচ্ছে প্রায় ২৮ বছর আগের টিনের ভাঙ্গাচোরা ঘর, সেখানেই চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও ১ম থেকে ৩য় শ্রণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে আম গাছ তলায় বসে। 

২০০৪ সালে মাদ্রাসাটি এমপিও হলেও অজানা এক কারনে মাদ্রাসাটি সরকারি ভবন হতে বঞ্চিত এমনটিই জানালেন সুপার, শিক্ষক ও স্হানীয়রা। প্রতি বছরেই ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে যার কারণে ক্লাস করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কষ্টভোগ করতে হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষার্থী আনুপাতিক হারে অন্তত ১০টি ক্লাশ রুমের প্রয়োজন থাকলেও আছে মাত্র ৮টি, তার মধ্যেও ৫টি ক্লাশ রুমের বেহাল দশা, পুরাতন জরাজীর্ন ঝুকিপুর্ণ একটু বৃষ্টি হলেই টিনের চালা দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। 

মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, কার্পাসডাঙ্গায় আমাদের বসবাস এখান থেকে অন্যসব প্রতিষ্ঠানের দুরত্ত বেশী সে কারনে আমাদের মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় খুব সহজেই শিক্ষা নিতে পারছি। কিন্তু ক্লাশ রুমের অভাবে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। একটি ভালো ভবন হলে সবাই উপকৃত হবে। 

মাদ্রাসার সুপার মাও: নুরুল আমিন জনবাণীকে বলেন, ‍‍“১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার সময় যে টিন ব্যবহার হয়েছিলো সেই ঘর এখনো আছে সেখানেও মেয়েদের ক্লাশ নেয়া হয়। একটু বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। বাঁশ-বেড়া ছাউনিতে ক্লাশ শুরু করা হয়।এখন সেখানে বেড়ার পরিবর্তে ইটের গাথুনি হয়েছে আর ছাউনি সেই টিনই আছে কিন্তু ইটের গাথুনি নড়বড়ে হয়ে গেছে যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। ফাকাঁ স্হানে মাদ্রাসাটি গড়ে উঠায় প্রতি বছর ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। সুপার হিসাবে কয়েকবার ভবনের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু সাড়া শব্দ কিছুই পায়নি। একটি ভবন হলে সব কষ্ট দুর হতো, মাদ্রাসাটি ফিরে পেত তার আসল রুপ।” 

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গাছ তলা ও জরাজীর্ণ ক্লাশ রুমের পরিবর্তে নতুন ভবনে ক্লাশ করতে পারে তার সু ব্যবস্হা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী সহ সচেতন মহল। 

মাদ্রাসার পরিচালনা পর্যদের সভাপতি মো: লুৎফর রহমান জনবাণীকে বলেন, “মাদ্রাসাটি জরাজীর্ণ হয়ে আছে শিক্ষার্থীদের পাঠদানও হচ্ছে গাছতলায়। সরকার বরাদ্ধকৃত ১০ লাখ টাকার ২৮ ফুট একতলা বিশিষ্ঠ একটি রুমের টেন্ডার দিয়েছিলো আমি সভাপতি হওয়ার আগে। সেই রুমের কাজটি এখন হচ্ছে। তাছাড়া মাদ্রাসা ভবনের জন্য কোথাও আবেদন করিনি। বর্তমানে আমি খুবই অসুস্হ, সুস্হ হলেও যেখানে যেখানে আবেদন করার দরকার সে সব জায়গায় আবেদন করবো।”    

এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা শিক্ষা প্রৌকশলী মো: ফজলুর রহমান জনবাণীকে বলেন, “মহিলা মাদ্রাসাটি শ্রেণী কক্ষের অভাবে মেয়েরা গাছ তলায় বসে ক্লাশ করে আমি এব্যাপারে অবগত। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নাই এবং কিছু নিয়ম মেনে কাজ করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন পেতে খুব বেশী   সময় লাগেনা। উনারা হইতো সেটি করতে পারেনি। আর ভবন তো আমাদের হাতে না এটা হচ্ছে আমাদের মাননীয় সাংসদ সদস্যর হাতে। তিনার নিকট যোগাযোগ করলে হইতো তাড়াতাড়ি ভবন পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মাদ্রাসাটির ক্লাশ রুমের জন্য অদ্য পর্যন্ত কেউ কোন আবেদন করেনি।”

এসএ/