চালককে জবাই করে অটোরিক্সা ছিনতাই, আটক ২
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
গাজীপুরের শ্রীপুরে কিশোর অটোরিক্সা ছিনতাই করতে চালক হাবিবুর রহমান দুখুকে (১৪) জবাই করে হত্যা করেছে ছিনতাইকারীরা। নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাটি রবিবার (৫ জুন) রাত দশটার দিকে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের জৈনা বাজর-গাজীপুর আনসার রোডে নগর হাওলা গ্রামের বনানী মাঠ এলাকার নির্জন স্থানে ঘটে। রাত ১২ টায় পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে।
পরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ঘাতক মৃদুলকে (২১) গ্রেফতার করে। মৃদুলের দেয়া তথ্যমতে পুলিশ মূল পরিকল্পনাকারী আমিরুলকে (২৫) গ্রেফতার করে। ঘটনার ১২ ঘন্টার মধ্যে শ্রীপুর থানা পুলিশ ক্লুলেজ হত্যাকান্ডে রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের আ: অহিদ মিয়ার ছেলে মৃদুল এবং ময়মনসিংহ জেলার কোতয়ালী থানার বোররচড় গ্রামের আ: খালেকের ছেলে আমীরুল।
নিহত হাবিবুর রহমান দুুখু মিয়া সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানার গাজগড়া গ্রামের মো: জাবেদ মিয়ার ছেলে। সে পরিবারের সাথে উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার সুলতান মাহমুদের বাড়িতে ভাড়া থেকে অটোরিক্সা চালাতো। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ ইতিয়াজ ভূইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “অটোচালককে হত্যার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। রাত ১২ টার দিকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশেই পড়েছিল হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্ত মাখা ছুরি ও মোবাইল ফোন। নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দিন আহম্মেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরো জানান, “গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের কথা শিকার করেছে। গ্রেফতারকৃত মৃদুল পেশায় অটোচালক মাঝে মধ্যে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। আমিরুল ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী। তারা দু’জনে পূর্ব পরিচিত। আমীরুল মৃদুলকে প্রলুব্ধ করে অটোরিক্সা চুরি করে এনে দিতে পারলে প্রতি রিক্সার জন্য তাকে ৫০ হাজার টাকা দিবে। টাকার লোভে মৃদুল রাজী হয়। আমীরুল মৃদুলকে চুরির কৌশল শিখিয়ে দেয়। তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যায় আমীরুল মৃদুলকে একটি ছুরি দেয় এবং বলে দেয় ভাড়া করে অটো নিয়ে নির্জনস্থানে গিয়ে কৌশলে অটোচালককে নামিয়ে হঠাৎ করেই গলায় ছুরি চালাতে হবে। পড়ে দ্রুত অটো নিয়ে পালিয়ে যেতে হবে। আমীরুলের পরিকল্পনা মতে মৃদুল কম বয়সী অটোচালক দুখুকে টার্গেট করে। সে অনুযায়ী রবিরার রাতে মৃদুল নগরহাওলা গ্রামের ডাচ বাংলা কারখানার মোড় থেকে পার্শ্ববর্তী ধনুয়া গ্রামে যাবার কথা বলে দুখুর অটোরিক্সায় উঠে। চলার পথে মৃদুল মোবাইল ফোনে আমীরুলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এক পর্যায়ে ওই স্থানে গিয়ে মৃদুল কৌশলে দুখুকে অটো থেকে নামায়। দুখু নামতেই মৃদুল কোমর থেকে ছুরি বের করে দুখুর গলায় আঘাত করে। দুখু মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সে অটোরিক্সা নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় চলে যায়। ভালুকা ব্রীজে আমীরুলের জন্য অপেক্ষা করে মৃদুল বাড়ি চলে আসে। ঘটনাস্থলে ফেলে যাওয়া মোবাইলের সূত্র ধরে নিজ বাড়ি থেকে মৃদুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মৃদুলের তথ্যমতে গ্রেফতার করে আমীরুলকেও। ক্লুলেজ হত্যা কান্ডের ১২ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ হত্যার রহস্য উৎঘাটন করতে সক্ষম হয়।"
নিহতের বড় ভাই পোশাক শ্রমিক সজিব মিয়া জানান, “তারা বাবা,মা,ভাই,বোন নিয়ে স্ব-পরিবারে ওই গ্রামের সুলতান মাহমুদের বাড়িতে আড়াই বছর ধরে ভাড়া থাকেন। পরিবারের সকলেই বিভিন্ন কারখানায় চাকুরী করেন। দুখুর বয়স কম তাই চাকুরী করতে পারেনা। ফেরী করে ছোলাবোট বিক্রি করতো। তাকে অটোরিক্সা কিনে দেয়া হয়। সম্পতি বোট বিক্রি ছেড়ে সে এখন জৈনাবাজার ও আশপাশের এলাকায় অটোরিক্সা চালাতো। তার অটোর ব্যাটারীতে চার্জ ছিলনা। নিজের অটোরিক্সাটি গ্যারেজে চার্জে বসিয়ে অন্য কারো অটোরিক্সা নিয়ে সে বের হয়। রাত আটটার দিকে দুখু তাকে পার্শবর্তী ভালুকা উপজেলার স্কায়র মাষ্টার বাড়ির কারখানা থেকে অটোরিক্সায় করে নিয়ে আসে। বাসায় নামিয়ে দিয়ে সে পুনরায় অটোরিক্সা নিয়ে বেড় হয়। রাত দশটারদিকে ও দুখু বাসায় ফেরেনি।এরই মধ্যে শুনতে পান নগড় হাওলা গ্রামের বনানী মাঠের পাশে একটি মরদেহ পড়ে আছে।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আমার ছোট ভাই দুখুর জবাই করা রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে।”
এসএ/