পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে স্বপ্ন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে স্বপ্ন

দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই প্রায় ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ফলে জীবনহানি, অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেঁচে থাকা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এমন অস্বাভাবিক দুর্ঘটনায় পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে স্বপ্ন। সম্প্রতি সীতাকুণ্ড, পাবনা, মেরুল বাড্ডা, মোহাম্মদপুরের বছিলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নিমতলি ট্রাজেডির এক যুগ পর এখন লোকমুখে শুধু সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। মানবিক বিবেচনায় তো আলোচনা হওয়ারই কথা; এ আলোচনার অন্যান্য কারণও আছে। এখন পর্যন্ত আমরা জানি না, এ ঘটনায় আসলে কতজনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের কতজন শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে জিতে ফিরবেন, সেটাও জানা সম্ভব না। যারা বেঁচে থাকবেন, তাঁদের কতজন পঙ্গু ও অসহায় হয়ে পড়বেন, তা অনুমান করা পর্যন্ত দুষ্কর।

শনিবার চট্রগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর রোববার পাবনার কিউলিন ইন্ডাস্ট্রি, সোমবার মেরুল বাড্ডায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ, একইদিন মোহাম্মদপুরের বসিলা সিটি ডেভেলপার হাউজিংয়ের আহমেদ ফুটওয়ার জুতার কারখানায় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কেন এত ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, সে প্রশ্নই এখন সবার মনে। আমাদের দেশে যেন অগ্নি দুর্যোগ চলছে। তবে এসবের পিছনে রয়েছে অসংখ্য কারণ। কতৃপক্ষের সঠিক পর্যালোচনায় ঘাটতি, নির্দিষ্ট নিয়মের গাফিলতি, জবাবদিহিতার অভাব।

ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএসএসএবি) তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর আগুনে পুড়ে গড়ে ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়। আহত হচ্ছে গড়ে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়া আগুনে প্রতি বছর গড়ে ৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার সম্পদ ভস্মীভূত হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গত আট বছরে সারা দেশে ১ লাখ ৩০ হাজার ২১৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে প্রায় ১১ হাজার মানুষ।

আর এদিকে শুধু কেমিক্যালের কারণেই দেশে বারবার অসংখ্য প্রাণ ঝরছে। গত এক যুগে প্রায় আড়াইশ’ মানুষের প্রাণ গেছে এই কেমিক্যালের কারণে। আর বিভিন্ন কারণে নয়টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৪৮৭ জন মানুষের। চুড়িহাট্টা ও নিমতলীর ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নানা সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে দীর্ঘ সময়েও এই সুপারিশগুলোর কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নিমতলী, চুড়িহাট্টা আর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ট্রাজেডি একই সূত্রে গাঁথা।

একেকটি ঘটনার পর আমরা জানতে পারি কার কী দায়িত্ব ছিলো এবং কেউ কোনো দায়িত্ব পালন করেনি। প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা মানে তো দালানকোঠায় কর্মকর্তা আর কর্মচারী থাকা নয়, কাগজে কলমে আইন থাকাও নয়। তারপর সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়, সেসব তদন্তের ফল কোথায় যায়, তা কেউই জানেন না। যারা গাফিলতি করল; তারা নামহীন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো-- এমন ঘটনা ঘটে না। দুর্ঘটনার পর সবার টনক নড়ে। তার আগে সকলে অচেতন অবস্থায় থাকে। দুর্ঘটনা ঘটলেই আসে নানান প্রতিষ্ঠান ব্যর্থতার কথা। কিন্তু সে সকল প্রতিষ্ঠানে থেকে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নানা সুপারিশ করা হলেও তা বাস্তবায়ন ও মেনে চলার মনোভাব খুব কম। এ কারণে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করা যায়।

নিজ দায়িত্ব পালন এবং জীবনযাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করলে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। প্রতিটি বিল্ডিংয়ে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিয়মিত কাজ করা প্রত্যেক কর্মচারীকেই অগ্নি নির্বাপণব্যবস্থা কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটার ট্রেনিং নিতে হবে। প্রতিটি কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানে ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিট আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। মাসে একবার হলেও নিয়মিত ফায়ার ড্রিলের ব্যবস্থা করতে হবে। অগ্নিকাণ্ড কখন ঘটবে, তা আগেভাগে বোঝার উপায় নেই। তবে সচেতন হলে দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য আগুন নেভানোর চেয়ে আগুন যেন না লাগে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এর পুনরাবৃত্তি রোধে নজরদারি বাড়াতে হবে। পরিশেষে বলব, সরকারকে আইনের প্রয়োগকে শতভাগে উন্নিত করে তা সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা করা।

লেখক: রিদুয়ান ইসলাম, শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এসএ/