জিয়াউল যেন চিড়িয়াখানার প্রাণী!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


জিয়াউল যেন চিড়িয়াখানার প্রাণী!

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাঁশিল গ্রামে দীর্ঘদিন যাবৎ পাকা ঘরে লোহার গ্রীলে তালাবদ্ধ মানবেতর বন্দী জীবন কাটাচ্ছে ফজলুল হকের ছেলে জিয়াউল হক (২৬) নামে এক যুবক।

সরজমিন ওই গ্রামে গেলে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ওই বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় জানালা বিহীন চার দেয়ালের একদিকে মোটা গ্রীলের দরজায় বড় বড় দুটি তালা। গ্রীলের নীচের অংশে একটি ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে খাবারের থালা বাহির থেকে ভিতরে দেওয়ার জন্য। দেখতে হুবুহু হাজতখানার মত। শিকের বেড়ার কাছে খালি গায়ে লুঙ্গি পরা ময়লাযুক্ত শরীরে জিয়াউল হক দাড়িয়ে আছে। পায়ের কাছে মেঝেতে একটি থালায় খাবার দেয়া রয়েছে। ছোট কক্ষটির একপাশে মেঝের উপর বিছানা পাতা। দেখতে পুরোটাই জেলখানার কয়েদীদের বন্দীশালার মত। 

আশপাশের লোকজন জানায়, মাসের পর মাস চার দেয়ালে তালাবদ্ধ জিয়াউল হক মানুষ দেখলেই চিৎকার করে বলে তাকে বের করার জন্য সে পাগল নয়।  

জিয়াউল হকের বড়ভাই স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক বিপ্লব জনবাণীকে জানান, ‍“পরিবারের ও আশ পাশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য অনেক টাকা খরচ করে আলাদা দালান ঘর বানিয়ে তাকে ওই অবস্থায় রাখা হয়েছে।” 

তিনি আরো জানান, “এক সময় নেশাগ্রস্ত ও মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে পরিবারের লোকজনকে মেরে আহত করা, ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করা সহ নানা রকম অত্যাচার শুরু করলে তাকে শিকলে বেঁধে রাখতেন। শিকলমুক্ত হয়েই যাকে পেতো তাকেই মারধোর শুরু করতো। তাকে সুস্থ্য করার জন্য মানসিক ও মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়েছে। কিছুদিন ভাল আচরণ করে পুনরায় মানুষকে মারধর শুরু করলে তাকে আইনের সাহায্য নিয়ে কিছুদিন জেল হাজতে রেখে নিজেরাই ছাড়িয়ে এনেছেন। পরবর্তীতে বাড়ীতে আনার পর কয়েক দিনের মধ্যেই পূর্বের রুপ ধারণ করে বাড়ীর মেয়ে ছেলে সহ বিভিন্ন জনকে মারপিট শুরু করে। উপায় না দেখে ইটের দেয়াল ঘেরা লোহার গ্রীলের ঘরটিতে তাকে রাখা হয়েছে। ঘরের ভিতর টয়লেট ও গোসলের ব্যবস্থা করা আছে সময় মত খাবার দেয়া হয়। ”

তিনি আরো জানান, “চিকিৎসার কোন ত্রুটি রাখেননি। তাকে সুস্থ্য করার জন্য ভবিষ্যতে আরও চিকিৎসা করবেন। কিন্ত ভিন্ন কথা বলছে গ্রামের লোকজন।” 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিবেশী জানান, “জিয়াউল হককে জেলখানার কয়েদির মত রাখা হয়েছে, সে নেশা করে গ্রামের কাউকে মারধোর করেছে এমনটা তারা শোনেননি। বরং পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন সময়ে শারিরিক নির্যাতন ও বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে একাধিকবার জেল হাজতে পাঠিয়েছে। সে লিগ্যাল এইডের সহায়তায় জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ী ফিরেছে। অনুমান ৩/৪ বছর পূর্বে জিয়াউল হক বিয়ে করার কিছুদিনের মধ্যেই পারিবারিক কলহের কারণে তার স্ত্রী ডিবোর্স নিয়ে চলে যায়। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে জিয়াউল হকের সাথে ছোট ভাই দীপুর ডিস ব্যবসা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তার প্রতি এহেন অমানবিক আচরণের জন্য এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে তারা অমুখ তমুকের ভয় দেখিয়ে শাসিয়ে দেয়। আশপাশের কোন লোকজনকে ওই যুবকের ঘরের কাছে যেতে দেয়া হয়না।” 

এলাকার সচেতন মহল মনে করেন জিয়াউল হকের প্রতি পরিবারের লোকজনের আচরণ মানবাধিকার লঙ্ঘণের সামিল। 

এ ব্যাপারে ভালুকার ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব আমিন খান জনবাণীকে জানান, “বিষয়টি তার জানা নেই তিনি খোঁজ নিবেন। প্রচলিত নিয়মের পরিপন্থি নির্জন বন্দীশালা হতে জিয়াউল হককে মুক্ত করে প্রকৃত কারণ উদঘাটনের মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা দ্বারা শারিরিক ও মানসিক সুস্থ্যতা অর্জন ও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি।”

এসএ/