মানিকগঞ্জে নিয়ম-নীতি না মেনেই প্রাইভেট হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ পিএম, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মানিকগঞ্জে নিয়ম-নীতি না মেনেই প্রাইভেট হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন

ভৈত অবকাঠামো সহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুবিধা না থাকলেও মানিকগঞ্জে শতাধিক বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের অবাধে হচ্ছে লাইসেন্স নবায়ন। স্বাস্থ্য প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার ফলে প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারাচ্ছেন নারী-শিশু সহ অগনিত রোগী।

জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের নিবন্ধন পেতে প্রয়োজনীয় ভৌত সুবিধা, সার্বক্ষণিক ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনার সহ প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ থাকা আবশ্যক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক ১০ বেডের একটি ক্লিনিকের অনুমোদনের ক্ষেত্রে শুধু রোগীর ওয়ার্ডের জন্য প্রতি বেডে ৮০ বর্গফুট করে মোট ৮০০ বর্গফুট জায়গা লাগবে। সেই সঙ্গে ওটি রুম, পোস্ট ওপারেটিভ রুম, ওয়াস রুম, যন্ত্রপাতি কক্ষ, লেবার রুম, ডক্টরস ডিউটি রুম, নার্সেস ডিউটি রুম, অপেক্ষমান কক্ষ, অভ্যর্থনা কক্ষ, অফিস কক্ষ, চেইনঞ্জিং রুম, স্টেরিলাইজার রুম, ভান্ডার রুম সহ সামঞ্জস্যপূর্ণ অনন্ত ১৩টি রুম থাকতে হবে।

এছাড়া পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, প্রসস্ত সিড়ি, জেনারেটর সহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে (বিল্ডিং তিন তলার অধিক হলে) লিফটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অপারেশন (ওটি) রুমে শীতাত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ওটি টেবিল, পর্যাপ্ত ওটি লাইট, সাকার মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ডায়াথারমি মেশিন, জরুরি ওষুধসমূহের ট্রে, রানিং ওয়াটার, অক্সিজেন, আইপিএসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সাধারণ বর্জ্য, ধারালো বর্জ্য, জীবাণুযুক্ত বর্জ্য, তরল বর্জ্যসহ সব ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও থাকা অত্যাবশ্যকীয়। জনবল কাঠামোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, তিন জন ডিউটি ডাক্তার, ছয় জন ডিপ্লোমা নার্স, প্রয়োজনীয় অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনার থাকতে হবে। এ ছাড়াও ফায়ার সাভিসের লাইসেন্স, ফার্মেসি পরিচালনার জন্য লাইসেন্স, পরিবেশ লাইসেন্স, পরমাণুবিক শক্তি কমিশন লাইসেন্স, মেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লাইসেন্স, নারকোটিকস লাইসেন্স, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি ইত্যাদি আবশ্যক।

কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রচলিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। দীর্ঘদিন যাবৎ পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে ঘষামাজা করেই চলছে এসব ক্লিনিক ও হাসপাতাল। বেশির ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সেবা মানহীন হওয়ায় প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসায় ঘটছে রোগির মৃত্যু। ভূল চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় ভূল রিপোর্ট প্রদান করায় সিভিল সার্জন অফিসে অভিযোগ এবং একাধিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু এগুলোর তদারকি বা মান নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নেই। ফলে চিকিৎসা পাওয়ার বদলে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ যেন দেখার কেউ নাই। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই প্রয়োজনীয় ভৌত (কক্ষ) সুবিধা নেই। নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নেই ডিউটি ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, টেকনিশিয়ান, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রয়োজনীয় জনবল এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও নেই এই প্রতিষ্ঠানে। বলতে গেলে প্রয়োজনীয় চাহিদার নুন্যতম সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান নেই। অথচ এসব নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কা না করে সিভিল সার্জন অফিসের এক শ্রেনীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে ও স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদতে বিপুল পরিমাণের অর্থের বিনিময়ে অনুমোদন পায় এসব প্রতিষ্ঠান বলে ভৃক্তভোগী একাধিক সুত্র জানায়।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা:মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী জনবাণীকে বলেন, ‍“যে সব প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের লাইসেন্স ইতোমধ্যেই প্রদান করা হয়েছে শুধুমাত্র তাদের লাইসেন্সই নবায়ন করা হচ্ছে। নবায়নের পর এসব ক্লিনিকের মান যাচাই-বাছাই করা হবে।”  

এসএ/