ঘুষ ছাড়া মিলারদের চাউল নিচ্ছেনা জীবননগর খাদ্যগুদাম!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ঘুষ ছাড়া মিলারদের চাউল নিচ্ছেনা জীবননগর খাদ্যগুদাম!

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর খাদ্যগুদামে চাউল দিতে ঘুষ নেওয়াসহ নানা ধরনের হয়রানির কারণে বোরো মৌসুমে চাউল দিতে অনিহা দেখা দিয়েছে মিলারদের মধ্যে।

মিলাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘আমরা চাউল তৈরি করে রাখলেও তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আমাদের চাউল ফিরিয়ে দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। তবে আমাদের থেকে অনেক নিম্নমানের চাউল রাতের আঁধারে গোডাউনে রিসিভ করা হচ্ছে। সামান্য কিছু ভালো চাউল খামালের চারপাশে দিয়ে ভিতরে নিম্নমানের চাউলে গোডাউনে ভরা হচ্ছে।’  

অভিযোগ আছে জীবননগর খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা কাউসার হোসেন নানা অযুহাতে অফিস না করে দেশের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তবে মাঝে মধ্যে অফিসে এসে একবারে উপস্থিতির খাতাই সাক্ষর করে চলে যান। 

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকালে খাদ্য গুদামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাউল সংগ্রহের সময়ে তিনি অফিসে নেই। তাতে চাউলের নমুনা নিয়ে আসা মিলাররা চাউলের নমুনা পরীক্ষা ও আদ্রতা মাপতে পারছেন না। অফিস থেকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে কাউসার সাহেব অফিসে না থাকায় আজ চাউল নেয়া হবেনা। এতে মিলাররা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।  

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক মিলাররা অভিযোগ করে বলেন, ‘খাদ্যগুদামে কেমনে চাউল দিব? কর্মকর্তাদের আচরণে এমন ভাব যে সিডি করাটাই যেন আমাদের অপরাধ হয়ে গেছে। খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি কাউসার, অফিস সহকারী রাকিবসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা কেজি প্রতি হাদিয়া দাবি করে বসে আছেন। তাদের কথায় রাজি না হলে নানা অযুহাতে আমাদের হয়রানি করে খাদ্যগুদামে আনা চাউল ফিরিয়ে দেয়। যত নিম্নমানের চাউল আনেন না কেন কেজি প্রতি হাদিয়া দিলে সব ভালো মানের চাউলে পরিণত হয় তাদের কাছে। এই ভোগান্তির কারণে আমাদের অনেক মিলার চাউল দিতে অনিহা প্রকাশ করছে।’

জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদাম সুত্রে জানা গেছে, বছরের চলতি বোরো মৌসুমে সরকারি ভাবে প্রতি কেজি চাউলে মুল্য নির্ধারিত করা হয়েছে ৪০ টাকা। মিলারদের নিকট থেকে চাউল ক্রয়ের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন। গত ২৯ মে ঘরোয়া পরিবেশের মধ্যে দিয়ে মিলারদের নিকট থেকে চাউল সংগ্রহের উদ্ধোধন করা হয়, চাউল সংগ্রহ চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

জীবননগর উপজেলায় ৫৬ জন মিলার আছে এদের মধ্যে সিডি তুলেছে মাত্র ৩১ জন, বাকি ২৫ জন মিলাররা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তাদের আর্থিক বাণিজ্যের কারণে চাউল দিতে অনিহা প্রকাশ করেছে। এ পর্যন্ত জীবননগর খাদ্যগুদামে চাউল দিয়েছে এএনজেএম অটো রাইস মিল, সততা রাইচ মিল ও বিল্লাল অটো রাইস মিল মিলে মাত্র ৩শ মেট্রিকটন। বাকি মিলাররা চাউল দেওয়া নিয়ে হতাশার মধ্যে রয়েছে। তারা খাদ্যগুদামে চাউল দিবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার লক্ষমাত্রার চেয়ে কম চাউল সংগ্রহ হবে ।

নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক আরো বেশ কিছু মিলাররা অভিযোগ করে বলেন, ‘জীবননগর খাদ্যগুদাম এখন ঘুষের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সেখানে মিলাররা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। নিচ থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে চাউল নিয়ে হয়রানিতে পড়তে হয়।’

জীবননগর খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি কাউসার হোসেন জনবাণীকে বলেন, “এ বছর যে পরিমাণ লক্ষমাত্রা ধার্য করা হয়েছে সে তুলনায় এখনও পর্যন্ত মিলাররা চাউল দিতে পারেনি। তবে এখনও সময় আছে, আশা করছি এই সময়ের মধ্যে মিলাররা চাউল দিয়ে দিবে।” 

তিনি আরো বলেন, “টাকা নিয়ে চাউল নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে এটা সম্পন্ন মিথ্যা। এখানে কোন আথিক লেনদেন হয় না। সরকার যে ভাবে চাউল নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেই ভাবেই মিলারদের নিকট থেকে চাউল সংগ্রহ করি।”

এসএ/