আ.লীগ নেতার বন বিট, হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আ.লীগ নেতার বন বিট, হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা

পটুয়াখালীর গলাচিপার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান ও ওয়াহিদ খান রাজের নের্তৃত্বে চলছে অবৈধভাবে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের সকল (ম্যানগ্রোভ) চরের বনের ও মাছের বিট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলার চর মোন্তাজ ইউনিয়নের মোন্তাজ ফরেস্ট ক্যাম্প অধিনস্থ বাগানের খালে মাছ শিকার করা হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের চর বেষ্টিন বাগানখাল, সোনার চরের বাগানের খাল, নয়ার চর বাগান খাল এবং বাইলাবুনিয়া স্লুইজ দখল করে বিভিন্ন লোকের কাজ থেকে প্রায় বিষ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আ.লীগ নেতা রাসেল খান ও ওয়াহিদ খান রাজ। 

স্থানীয় জেলে শাহিন শরীফ ও মামুন সিকদার বলেন, ‍“চরমোন্তাজ ইউনিয়নে আ. লীগের পোষ্ট পাওয়ার সাথে সাথে চর, খাল, স্লুইজ টাকার বিনিময় ডাক দেওয়া শুরু করেন। টাকা দিতে না পারলে বনে মাছ ধরা নিষেধ। যে সকল লোক টাকা দিয়েছে তারা খালে মাছ ধরার জন্য আড়াআড়ি ভাবে দিয়েছে মাটির বাঁধ। মাছ ধরতে ছিটানো হয়েছে কীটনাশক। খালের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। চর বেষ্টিন ও সোনার চরের বনের এই খালেও দেওয়া হয়েছে আড়াআড়িভাবে মাটির বাঁধ। মাছ ধরতে ছিটানো হয়েছে কীটনাশক। খালের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।” 

জানা গেছে, বন বিভাগের পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) ৫টি বনের কমপক্ষে ৩০টি খালে বাঁধ দিয়ে অবাধে মাছ শিকার চলছে। দ্রুত মাছ ধরতে অনেকে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। মাছ ব্যবসায়ীদের এমন অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে বন বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে সোনার চরের বাগানের খাল, নয়ার চর বাগানের পাঁচটি খালে মাটির তৈরি একাধিক বাঁধ দেখা গেছে। তবে বাঁধের এই সংখ্যা আরও বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। তাঁরা বলছেন, ‘নদী ও খালের সংযোগ স্থলে বাঁধগুলো দিয়েছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। এক মাস ধরে এভাবে বাঁধ দেওয়া ও মাছ ধরা চলছে।’ 

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও বনায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুর রহমান জনবাণীকে বলেন, “শ্বাসমূলীয় বনের ভেতরের খালগুলোতে জোয়ার-ভাটার প্রয়োজন রয়েছে। খালগুলোতে বাঁধ দিলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। সেচ দিয়ে পানি শুকিয়ে ফেললে গাছের শ্বাসমূল পানি পাবে না। বনের গাছও প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবে না ও বাঁধা গ্রস্ত হবে। তাই কোনোভাবেই বনের খালে বাঁধ দেওয়া যাবে না। এভাবে অবাধে মাছ ধরায় ক্ষতির মুখে পড়ছে শ্বাসমূলীয় বন। ঝুঁকিতে পড়ছে বনের পশুপাখি ও জীববৈচিত্র।”

চরমোন্তাজ রেঞ্জের বিট অফিসার মোঃ হায়দার জনবাণীকে বলেন, “চর বেষ্টিন বাগানখাল, সোনার চর বাগানের খাল, নয়ার চর বাগানসহ দ্বীপচরে বন বিভাগের শ্বাসমূলীয় বন রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এই দ্বীপচরগুলো জেগে উঠেছে। এখানে সংরক্ষিত বনও আছে। ছয়টি চরের বনের আয়তন প্রায় ১৫ হাজার একর।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী জানান, ‘এই বছর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান ও ওয়াহিদ খান রাজের প্রতিটি বনে মাছ ধরার জন্য পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা দিতে হয়। সেচ দিয়ে মাছ ধরতে সময় ও অনেক টাকা খরচ হয়। মাছ ধরার জন্য জেলেরা কীটনাশক ব্যবহার করে কম খরচে দ্রুত সময়ে খাল থেকে মাছ ধরে নেন।’

চরমোন্তাজ আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জনবাণীকে বলেন, “টাকার বিনিময় বন বিট দিয়েছি এটা মিথ্যা কথা। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমরা কোন বন বিট দেই না বন বিভাগ থেকে এ বছর মাছ ধরার অনুমতি দিতে পারে।”

এসএ/