৫ যুগ ধরে ডিঙি নৌকা তৈরী করছেন মালেক, বর্ষা আসলেই বিক্রির ধুম


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


৫ যুগ ধরে ডিঙি নৌকা তৈরী করছেন মালেক, বর্ষা আসলেই বিক্রির ধুম

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার পোড়াবাড়ী বাজারে ৫ যুগ বছর ধরে ডিঙি নৌকা তৈরী করে চলেছেন আব্দুল মালেক। বর্ষার পানি বাড়ার সাথে সাথে ডিঙি নৌকা তৈরি ও বেচাকেনার ধুম পড়েছে । উপজেলার কোথাও কোথাও নৌকাই যেন তাদের একমাত্র ভরসা। তাছাড়া যাদের পুরাতন নৌকা আছে সেটাকেও তারা মেরামত করে নিচ্ছেন চলাচলের উপযোগী করে।

বর্ষাকাল আসলেই আব্দুল মালেক নৌকা তৈরীর কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেন। তিনি প্রতি মৌসুমে ৪০ থেকে ৫০ টি ডিঙি নৌকা তৈরী করেন। আর এসব নৌকা বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকায়।

জানা যায়, উপজেলার খিরু নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলিতে স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থীরা নৌকার মাধ্যমে স্কুলে যাতায়াত করে থাকে। বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এলাকার মৌসুমি জেলেরা নৌকা দিয়ে রাত দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। উপজেলার নিচু এলাকার বাসিন্দারা ডিঙি নৌকার মাধ্যমে খেয়া পার হয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম ও হাটবাজারে যায়। এ এলাকায় নৌকার ব্যবহার হচ্ছে যুগ যুগ ধরে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের পোড়াবাড়ী বাজারে আব্দুল মালেক নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন বড় ছেলে। তারা কেউ করাত দিয়ে কাঠ কাটায় ব্যস্ত কেউ হাতুড়ি দিয়ে নৌকায় পেরেক লাগাতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে চলছে তৈরী নৌকা বিক্রির জন্য ক্রেতাদের দাম কষাকষি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ক্রেতারা তাদের পছন্দসই নৌকা এখান থেকে কিনে নিচ্ছেন। মাছ ধরা ডিঙি নৌকা এখান থেকে বেশী বিক্রি হয়। 

নৌকা তৈরির কারিগর আব্দুল মালেক জনবাণীকে জানান, ‍“গত ৫ যুগ ধরে ডিঙি নৌকা তৈরীর কাজ করে আসছি। তবে আগের মত পানি না আসায় এখন নৌকার বেচা-কেনাও কম। তাই নৌকা তৈরীর পাশাপাশি কাঠের আসবাপত্র তৈরী করি। এখন আর আগের মত কাজ করতে পারিনা, আদি পেশা তাই কষ্ট করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। আমার সাথে বড় ছেলে কাজে সহযোগীতা করে। বর্ষাকাল আসলে নৌকার কদর বাড়ে। আমি প্রতি বর্ষা মৌসুমে ৪০ থেকে ৫০ টি নৌকা বিক্রি করি।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা যেসব নৌকা তৈরি করি সে নৌকাকে স্থানীয়ভাবে কোষা বা ডিঙি নৌকা বলা হয়। কোষা বা ডিঙি নৌকা তৈরি করতে দুইজন কারিগরের এক থেকে দুইদিন সময় লাগে।  এখন নৌকা তৈরি করে রেখেছি, কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে। এ নৌকা বিক্রির টাকা দিয়েই আমার সংসার চলে।”

পোড়াবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী সাত্তার শেখ জনবাণীকে বলেন, “আব্দুল মালেক দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করে আসছেন। অনেক এলাকায় সড়কগুলো ভালো এবং উপজেলার সড়কের সঙ্গে যোগযোগ রয়েছে তাদের চলাচলে সমস্যা হয় না। কিন্তু নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষগুলোর বর্ষায় চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। এ সময় গ্রামগুলোর চারপাশে পানি থৈ-থৈ করে। নৌকা দিয়ে চলাচলে এ এলাকার জন্য সুবিধা, সড়ক পথের চেয়ে সময় অনেক কম লাগে।  এ এলাকার নৌকা আব্দুল মালেক নতুন তৈরী করাসহ মেরামতের কাজও করেন। বর্ষাকাল আসলেই তিনি অনেক নৌকা তৈরী করে বিক্রি করেন। নৌকা তৈরীতে তার অনেক সুনাম রয়েছে।”

নৌকা তৈরীর কারিগর আব্দুল মালেক ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ী গ্রামের বাসীন্দা। তিনি ১০ বছর বয়স থেকেই ত্রিশাল উপজেলার পোড়াবাড়ী বাজারে নৌকা তৈরীর কাজ করেন। তার সংসারে তিন ছেলে ও পাচঁ মেয়ে রয়েছে। তিনি বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরী করেন ও বছরের বাকী সময় কাঠের আসবাবপত্র তৈরী করেন। 

এসএ/