বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে হিটস্ট্রোকে শ্রমিকের মৃত্যু


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে হিটস্ট্রোকে শ্রমিকের মৃত্যু

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে হিটস্ট্রোকে সিরাজুল ইসলাম (৩৬) নামের এক দেশি খনিশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

খনিশ্রমিক সিরাজুল ইসলামের হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. সুলতান মাহমুদ। 

হিটস্ট্রোকে মৃত্যুবরণকারি খনিশ্রমিক সিরাজুল ইসলাম পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রামের আইনুল হকের ছেলে এবং বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের অধিনে কয়লাখনিতে ভূগর্ভ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

খনি সূত্রে জানা যায়, সিরাজুল ইসলাম গত বুধবার (১৩ জুলাই) রাত ১১ টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সকাল সাত টা পর্যন্ত শিফটের খনির ভূগর্ভের কাজ শেষ করে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠ উঠে এসে তার রুমে আসার সময় আকস্মিকভাবে সিরাজুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তার সহকর্মীরা তাকে খনির অভ্যন্তরের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় চিকিৎসক নিহতের সঙ্গীদের জানিয়েছেন মাত্রারিক্ত তাপদাহে সিরাজুল ইসলাম হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন।

কয়লাখনির চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের অধিনে কর্মরত বেশ কয়েকজন শ্রমিকের অভিযোগ, তাদেরকে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার গরমের মধ্যে তাদেরকে ভূগর্ভের অভ্যন্তরে কাজ করতে হচ্ছে। কাজ শেষে ভূপৃষ্ঠে এসে তাদেরকে থাকতে হচ্ছে টিনের সেডের ঘরে। সেখানেও অসহনীয় গরমে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

নিহতের সঙ্গী খনিশ্রমিকরা জানান, চলতি বছরের ৩ জুন সিরাজুল ইসলামসহ তার দলের শ্রমিকেরা খনিতে কাজের জন্য খনিতে অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা সপ্তাহব্যাপী হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পর ১১ জুন থেকে খনির ভূগর্ভের ১৬০৬ নং কোল ফেইসের উন্নয়ন কাজে যোগ দেন। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে।  

খনি শ্রমিকরা অভিযোগ, বর্তমানে সারাদেশে স্বাভাবিক নিয়মে অফিস-আদালতসহ সকল ক্ষেত্রে সার্বিক কার্যক্রম চললেও ব্যতিক্রম শুধু বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড। কর্তৃপক্ষ খনিতে এখনও লকডাউন কার্যকর করে চলছেন। এ কারণে শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজনকে মাসের পর মাস ফেলে রেখে খনির অভ্যন্তরের টিনের ঘরে গাদাগাদি করে মানবেতরভাবে বসবাস করছেন। ভূগর্ভের ভেতরেও মাত্রাতিরিক্ত গরমে কাজ শেষে নিজের বসবাসের জন্য বরাদ্দকৃত টিনের ঘরে আসে সেখানেও তাপদাহে প্রায়ই শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোন নজরদারী নেই। 
 
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক সুলতান মাহমুদ জনবাণীকে বলেন, “খনির চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, খনিশ্রমিক সিরাজুল ইসলামের হিটস্টোকে মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জনবাণীকে বলেন, “মৃত্যুবরণকারী শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম খনির চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের অধিনে কর্মরত শ্রমিক ছিলেন। চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খনিতে লকডাউন রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও উন্নতি হলে লক ডাউনও তুলে নিয়ে স্বাভাবিক নিয়মের কাজ কর্ম শুরু করা হবে।”

এসএ/