আসামী না হয়েও জেলে যুবক, এ দায়ভার কার?


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আসামী না হয়েও জেলে যুবক, এ দায়ভার কার?

কোন মামলার আসামি না হয়েও নাম বিভ্রাটে একদিনের জেল খাটলেন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন দোস্ত গ্রামের আবু সাইদ। ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক এক আসামির সঙ্গে নামে কিছুটা মিল থাকায় একদিনের জেল খেটে জামিনে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে। 

অভিযোগ রয়েছে, আসামির নাম, বাবার নাম এবং ঠিকানার সাথে কিছুটা মিল থাকায় নিরাপরাধ আবু সাইদ (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে দর্শনার এএসআই হাফিজ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। গ্রেফতারকৃত আবু সাইদ সে দিন হাজারো মিনতি করলে তার কথা দর্শনা থানার কেউ শোনেন নি। মামলার প্রকৃত আসামির নাম সাইদুর রহমান (২৫)। আসামি না হয়েও আবু সাইদকে জেল খাটানো এবং আর্থিক হয়রানির দায়ভার  কে নেবে?

জানা যায়, ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টম্বর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর বোয়ালমারি পাড়ার আব্দুর রফিকের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক মুদি দোকানের মালামাল ক্রয়ের জন্য বাড়ি থেকে দর্শনার দিকে আসছিলেন। এ সময় তিনি আমতলা মোড়ের ফারুক হোসেনের বাড়ির সামনে পৌছালে দোস্ত গ্রামের মোল্লাপাড়ার মসলেম উদ্দিনসহ কয়েকজন তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। ঘটনার পরপরই আহত বাক্কাকে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এবং রাতে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করে দায়িত্বরত চিকিৎসক। এ ঘটনায় ১৯ সেপ্টম্বর বাক্কার স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন বাদি হয়ে মৃত জব্বার মোল্লার ছেলে মসলেম, সিরাজের ছেলে সাইদুল, জসিম মোল্লার ছেলে আইয়ুব আলী, ইলিয়াস টাকের ছেলে দরুদ আলী ও সাদেক বাচ্চুর ছেলে পান্নু খাঁকে আসামী করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন (জি,আর ৩৬৪/১২)। মামলার তৎকালিন তদন্তকারি অফিসার এসআই রবিউল ইসলাম (বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত) দীর্ঘ তদন্তের পর ২৭/০৬/২০১৩ তারিখে আইয়ুব মোল্লা, দরুদ ও পান্না খাঁকে মামলার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় এবং মসলেম, সাইদুর রহমান, ওমর আলী ও সাইদুর রহমানকে আসামি করে আদালতে চার্জসীট দাখিল করেন। যেখানে একজন সাইদুর রহমানের পিতার নাম সিরাজ ও অপর সাইদুর রহমানের পিতার নাম ইদু মিয়া মন্ডল উল্লেখ আছে। 

দোস্ত গ্রামের সিরাজ প্রধানের ছেলে আবু সাইদ (৪২) ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসলে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে দর্শনা থানার এএসআই হাফিজ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। এক দিন জেল খেটে পরের দিন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে ফেরেন তিনি। 

আবু সাইদ অভিযোগ করে জনবাণীকে বলেন, “আমাকে যখন পুলিশ গ্রেফতার করে তখন হাজারও বার বলেছি আমি কোন মামলার আসামি না। আমার নাম সাইদুর রহমান না। এই দেখেন আমার জাতীয় পরিচয় পত্র। কোন কথায় কর্ণপাত করেননি পুলিশ। কোন মামলার আসামী না হয়েও আমাকে একদিন জেল খাটতে হলো। সেই সাথে জামিন হতে ৬ হাজার টাকা খরচ হলো। এমন কি থানায় গিয়ে একই কথা বলেছি তাতেও কাজ হয়নি উল্টো পুলিশের ধমক খেতে হয়েছে। জামিনে বাড়িতে এসে গতকাল দর্শনা থানায় গিয়ে ছিলাম। খুব একটা লাভ হয়নি।” 

এ ব্যাপারে হামলার শিকার হওয়া আবু বক্কর ছিদ্দিক জনবাণীকে বলেন, “আমার মামলার আসামি দোস্ত গ্রামের বসুতিপাড়ার ইদুর ছেলে সাইদুর রহমান, আমতলা পাড়ার সিরাজ উদ্দিন ওরফে সিরুর ছেলে সাইদুর রহমান। সিরাজ প্রধানের ছেলে আবু সাইদ মামলার আসামি না। কেন তাকে পুলিশ গ্রেফতার করল আমার জানা নেই।” 

এএসআই হাফিজ বলেন, “সঠিক ব্যাক্তিকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশি কিছু জানার থাকলে ওসি সাহেবের সাথে কথা বলেন।” 

এ বিষয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর জনবাণীকে বলেন, “ওয়ারেন্ট মূলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওয়ারেন্টের সাথে পিতার নামের মিল আছে। কোর্টে তাকে পাঠানো হলে তার নামের সাথে মিল থাকায় কোর্ট তাকে রিসিভ করে।”

উল্লেখ্য, এ মামলার প্রধান আসামি মসলেম উদ্দিন মৃত, ৪ নং আসামী ইদুর ছেলে সাইদুর রহমান মালয়েশিয়া প্রবাসি। এদেকে এলাকার সচেতন মহলের প্রশ্ন মামলার আসামি না হয়েও জেল খাটা এবং জামিন নেওয়ার দায়ভার আসলে কার? সে দিন আবু সাইদের আকুতিটি পুলিশের গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। এটা চরম দায়িত্ব অবহেলার মধ্যে পড়ে। কারণ প্রতিটি মানুষের রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা। 

এসএ/