মানিকগঞ্জ জমে উঠেছে ২০০ বছরের পুরনো নৌকার হাট


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মানিকগঞ্জ জমে উঠেছে ২০০ বছরের পুরনো নৌকার হাট

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় জমে উঠেছে ২০০ বছরের পুরনো দেশের অন্যতম নৌকার হাট। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা, অবিরাম বর্ষণ ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে মানুষজন নৌকা কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ঘিওর হাটে। 

সরেজমিন এমন দৃশ্য দেখা গেল ঘিওর নৌকার হাটে। নির্ধারিত হাটের জায়গার সঙ্কুলান না হওয়ায় পাশেই ডিএন পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম পুরো এলাকা। এখানে সাধ্যের মধ্যে সব শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য রয়েছে নানা ধরনের নৌকা।

পদ্মা-যমুনা, কালীগঙ্গা, ইছামতি ও ধলেশ্বরীসহ ছোট বড় বেশ কয়েকটি নদীবেষ্টিত জেলা মানিকগঞ্জে বর্ষার পানি প্রবেশ করায় নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ভরপুর। বিশেষ করে ঘিওর, হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার বেশির ভাগ এলাকাই নিচু। পদ্মা-যমুনার সাথে এই চারটি উপজেলার সরাসরি সম্পর্ক থাকায় সাধারণত বর্ষাতেই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। আর তাই বন্যার পানি আসার আগে থেকেই নৌকা প্রস্তুত করে রাখা হয়।

জেলা ও জেলার বাইরের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এ হাট থেকে নৌকা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সাপ্তাহিক হাটবার বুধবারে ২০০ থেকে ৩০০ নৌকা বেচাকেনা হয়।

কাঠমিস্ত্রি সুবল সূত্রধর ও আশিষ সূত্রধর জনবাণী বলেন, ‍“প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। সপ্তাহে আমাদের কারখানা থেকে ২০-২২টি নৌকা হাটে নেয়া হয়। বর্তমানে কাঠ, লোহা ও অন্যান্য সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচ বেড়েছে।” 

তারা জানায়, সাধারণত জামরুল, রেইনট্রি, আম, কদম, শিমুল, বৈন্যা, ডোমরা ইত্যাদি কাঠ দিয়ে ডিঙ্গি, কোশা ও স্টিল বডির নৌকা তৈরি করছি।

জাবরা গ্রামের বিক্রেতা কানাই চন্দ্র সূত্রধর জনবাণী বলেন, “১০ হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রস্থের একটি নৌকার মূল্য পাঁচ হাজার, ১১/৩ সাইজের ছয় হাজার, ১৩/৩ সাইজের সাত হাজার ও ১৫/৩ সাইজের নৌকা আট থেকে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের স্টিলের নৌকা তৈরিতে খরচ ও দাম একটু বেশি।”

মৌহালি গ্রামের ক্রেতা হালিম বলেন, “তিনি বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকার করে সংসার চালান। তাই সাড়ে আট হাজার টাকা দিয়ে তিনি একটি নৌকা ক্রয় করেছেন।”

বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন মুসা বলেন, “ঘিওর হাটের ঐতিহ্য ২০০ বছরেরও বেশি। এখানে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মানুষ নৌকা কেনা-বেচা করে থাকেন।”

উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান জনবাণীকে বলেন, “এ নৌকার হাটটি আমাদের জেলা ও উপজেলার ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। আমার জন্মের পর থেকে দেখে আসছি এই হাট। এই হাটের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ হাটে নৌকা কিনতে আসে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।”

এসএ/