আটশো বছরের পুরনো ইতিহাস ‘মাচাইন শাহী মসজিদ’


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আটশো বছরের পুরনো ইতিহাস ‘মাচাইন শাহী মসজিদ’

মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় আটশো বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক ‘মাচাইন শাহী জামে মসজিদ’। সুদৃশ্য তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট শৈল্পিক কারুকাজে সজ্জিত মূল অংশটি অসাধারণ খাঁজকাটা কারুকাজে সমৃদ্ধ, মসজিদটি দেশের অন্যতম একটি পুরাকীর্তি, নজরকাড়া দেয়ালগুলো নিখুত সুন্দর কারুকাজে ভরপুর, অনেকটা তুর্কি ধাচে এটি নির্মাণের জন্য চুন, সুড়কি,ও সাদা সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাচীন শিলালিপি অনুযায়ী মসজিদটি ১৫০১ সালে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ কর্তৃক নির্মিত বলে জানা যায়। তবে স্থানীয় অনেকের অভিমত; এটির বয়স আটশো বছর হতে পারে।

মানিকগঞ্জ অঞ্চলের মুসলিম পুরাকীর্তিগুলোর অধিকাংশই বাংলার স্বাধীন সুলতানি মুসলিম শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যার মধ্যে মাচাইন গ্রামের এ মসজিদটি অন্যতম। কথিত আছে স্বাধীন সুলতানি আমলে মাচাইন একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম ছিল। যেখানে হজরত শাহ্ রুস্তম নামে একজন দরবেশের আস্তানা থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচার করা হতো, বর্তমানে যার মাজার এ মসজিদের পাশেই রয়েছে, প্রতিদিন বহু মানুষ এ মাজার জিয়ারতে  আসেন।

মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের মাচাইন শাহী মসজিদ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের টেপরা ও পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে।

জনশ্রুতি রয়েছে, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে ‘শাহ্ রুস্তম’ ইয়েমেন অথবা ইরাক থেকে এখানে এসে বাঁশের মাচাইন পেতে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। ইছামতি নদীর উপরে বাঁশের মাচানে বসে ইবাদত করতেন। তাই মাচাইন শব্দটিই পরবর্তীতে ‘মাচাইন গ্রাম’ নামে পরিচিতি লাভ করে ।

সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন ইসলাম প্রচারে বিশেষ ভুমিকা রাখার জন্য এই দরবেশের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ এলাকায় ইসলাম প্রচারের সুবিধার্থে ১৫০১ সালে এখানে একটি সুরম্য মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন শিল্পমণ্ডিত মসজিদটি হযরত শাহ্ রুস্তম (রঃ)’র পুণ্যস্মৃতি বহন করছে। এ মসজিদটি মানিকগঞ্জ জেলার অন্যতম প্রাচীন স্থাপত্য ও পুরাকীর্তি। বর্তমানে এটি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। কয়েক বছর আগে প্রাচীন এই মসজিদটি সংস্কার করা হলেও ইদানিং গম্বুজ চুইয়ে পানি পড়ে বলে জানান মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান।

সম্প্রতি মসজিদ ও মাজার কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমান ও সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী ফিরোজ মিয়া জানান, “এ এলাকায় মসজিদটি অনেক ইতিবাচক ভুমিকা রাখছে। ৩৩ শতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মাদ্রাসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।” 

এ বিষয় নিয়ে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, “গম্বুজ চুইয়ে পানি পড়ে এটা আমাকে জানানো হয়নি, যাই হোক সমস্যা হবেনা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

এসএ/