নিষেধাজ্ঞা শুধু আনোয়ারার জেলেদের জন্য!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নিষেধাজ্ঞা শুধু আনোয়ারার জেলেদের জন্য!

প্রজনন মৌসুমে মা ও জাটকা ইলিশ নিধন রোধে ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত চলমান রয়েছে সরকারের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকা গহিরা ও রায়পুর এলাকার ২৭০০ জেলে পরিবার পার করছে মানবেতর জীবনযাপন। এদিকে সাগর উপকূলের জেলেদের জন্য মৎস্য আহরণে নৌপুলিশ ও মৎস্য অফিস কঠোর হলেও সাগরে অবাধে মাছ ধরছে নোয়াখালী, সন্দ্বীপ ও হাতিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বড় বড় ফিশিং বোট। 

স্থানীয় জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা কী শুধু আনোয়ারার জেলেদের জন্য! বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাগরে বড় বড় বোট নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ নিধন করেই চলছে। স্থানীয় জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মানলেও অতিরিক্ত দামের আশায় কোনো নির্দেশনা মানছেন না বাইরের জেলেরা। বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে ডিমওয়ালা ও জাটকা ইলিশ শিকার করছে তারা। এদে নৌপুলিশ ও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, সাগরে গিয়ে প্রতিদিন শিকার করা হচ্ছে হাজার হাজার মণ ইলিশ। আমরা শুধু উপকূল থেকে কিছু ছোট মাছ ধরলেও আমাদের ওপর নির্যাতন ও জরিমানা করে নৌপুলিশ। এদিকে উপকূল থেকে দুই ঘণ্টা বোট চালানোর পর সাগরে রয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অন্তত ৫ হাজার বড় ফিশিং বোট এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। অথচ নির্বিকার রয়েছে নৌপুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। নির্বিচারে ইলিশ আহরণ করলেও নৌপুলিশ কিংবা কোস্ট গার্ড কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কিন্তু স্থানীয় জেলেদের ওপর নৌপুলিশের হামলা, মামলা ও প্রশাসনের হয়রানি চরমে বলছেন জেলেরা।

এছাড়াও সামনে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে সাগরে জেলেদের ইলিশ ধরার সীমানা খুঁটিগুলো দেখতে স্থানীয় জেলেরা সাগরে গেলে মাছ ধরতে আসা বড় বড় ফিশিং বোট জেলেদের করছে মারধর। স্থানীয় জেলেদের ইলিশ ধরার পাড়গুলো কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও জানান জেলেরা। এতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

এদিকে জেলেরা ছোট সাম্পান নিয়ে ইলিশ ধরার পাড়গুলো দেখতে গেলে বড় বোটগুলোর জেলে দ্বারা প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উঠান মাঝির ঘাট এলাকার একাধিক জেলে জানান, নৌপুলিশের যোগসাজশে এসব কাজ করছে বাইরের বোটগুলো। স্থানীয়দের মধ্য থেকেও নৌপুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের মৎস্য অধিদপ্তর অবৈধ অর্থের বিনিময়ে কাউকে কাউকে মাছ ধরার বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। অথচ দিনমজুরিতে চলতে না পারা জেলেরা ছোট জাল দিয়ে মাছ ধরলে তাদের দ-িত করছে প্রশাসন।

ফারুক নামের এক ট্রলার মালিক বলেন, “আমার ৭টি মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। সাগর থেকে তুললে প্রতিটি ট্রলারে কাজ করাতে হয়। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাঝে মাঝে গিয়ে আমাদের মাছ ধরার পাড়গুলো (জায়গা) দেখেশুনে ঠিক করে আসতে হয়। একবার যেতে প্রতিটি ট্রলারে ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। সব মিলিয়ে প্রত্যেক ট্রলার মালিকের মাথায় বড় ঋণের বোঝা চাপে।”

এদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে আমাদের সীমানা থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা তো সরকারের নিষেধাজ্ঞা মানছি কিন্তু বাইরে থেকে এসে সব মাছ নিয়ে যাচ্ছে; অথচ পুলিশ প্রশাসন কিছু বলছে না। উল্টো আমাদের মাছ ধরার খুঁটিগুলো দেখতে গেলে হুমকি দিচ্ছে সাগরে এলে সাম্পান ডুবিয়ে দেবে, এমনকি আমাদের হত্যা করার মতোও হুমকি দিচ্ছে।

উঠান মাঝির ঘাট কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, “মাছ ধরার এই দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞায় উপকূলের মানুষরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সবাই আড়তদার, মহাজন, ব্যাংক বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে সাগরে মাছ ধরার কাজে লাগায়। এখন দীর্ঘ সময় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় এসব লোন নিয়ে বিপাকে পড়েছে ট্রলার মালিকরা। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী গহিরা ও রায়পুর এলাকার হাজার হাজার জেলে পরিবার খুবই কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। চলমান ৬৫ দিনের দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞায় সরকারের পক্ষ থেকে ৮৩ কেজি চালের সহায়তা করা হলেও কোনো কোনো জেলের কপালে তাও জোটেনি।”

এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক জনবাণীকে বলেন, “চলমান নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের জীবন নির্বাহের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ৩৫৮৯ জেলের মাঝে ৫৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে আরো ৩৩ কেজি করে বিতরণ করা হবে। আর অন্যান্য জায়গা থেকে এসে মাছ মারার বিষয়ে আমি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলার মিটিং চলাকালে আলোচনা করেছি।”

সাগরে শৃঙ্খলা বিষয়ে নৌপুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া জনবাণীকে বলেন, ‍“আসলে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞা সময়ে জেলেদের বিরত রাখতে। তবে সাগরের গভীরে যাওয়ার মতো আমাদের শক্তিশালী বোট নেই। এটা সব প্রশাসন সমন্বয় করে অপারেশনে যেতে হবে। তবুও বিষয়টি আমি সিরিয়াসলি নিচ্ছি। আমার ফোর্সকে আজকের মধ্যে এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশ দিচ্ছি।”

এসএ/