হিজরাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম নগরবাসী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


হিজরাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম নগরবাসী

হিজরাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম নগরবাসী। রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, রেলস্টেশন, শপিংমল থেকে শুরু করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে তাঁরা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে সাপ্তাহিক চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা না দিলে প্রকাশ্যে নাজেহাল করেন তাঁরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাঁরা বিচার পাননা। 

তবে পুলিশ বলছে, চট্টগ্রামে তাঁরা এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাননি। অন্যদিকে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে হিজরাদের রাষ্ট্রীয় পূনর্বাসনের পরামর্শ দিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ট্রাফিক সংকেতে যানবাহন থামার পর হিজড়ারা সামনে এসে দাঁড়ালে যাত্রীদের কিছু করার থাকে না। তাদের সঙ্গে তর্ক করলে যাত্রীদের আরও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। শুধু তাই নয়, চাঁদার জন্য অফিসের ভিতরেও ঢুকে পড়েন। না দিলে সাথে সাথে নাজেহাল করেন তাঁরা। 

সোমবার (২৫ জুলাই) সকালে দেখা যায়, হিজড়াদের একটি দল নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল পড়লেই দৌড়ে এসে যানবাহনে থাকা যাত্রীদের কাছে টাকা দাবি করছে। না দিলে যাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করছেন। ঝাপটাঝাপটি করে টাকা দিতে বাধ্য করছেন।
 
নাজিম উদ্দীন নামে নিউমার্কেট এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, “আগে মানুষ যা দিত, তা নিয়েই খুশি থাকত হিজড়ারা। কিন্তু ইদানীং তাদের আচরণ বদলে গেছে। যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করছেন তাঁরা।”

কয়েক দিন আগে হিজড়াদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা রবিউল। তিনি বলেন, “স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কাজে পার্কে যাচ্ছিলাম। ২ নাম্বার গেইট এলাকায় ট্রাফিক সিগনাল পড়তেই দুই হিজড়া দুপাশে এসে দাঁড়িয়ে টাকা চাইল। পকেট থেকে টাকা বের করতেই সব টাকা ঝাপটে নিয়ে গেল। এ যেন প্রকাশ্যে ঝাপটাবাজি! তখন আমি নিরুপায়, কিংকর্তব্যবিমূঢ়!”

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কয়েকজন হিজরার সাথে। তাঁরা জানান, “টাকা না তুলে তাদের উপায় নেই। বেঁচে থাকার তাগিদে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। তাদেরকে কেউ কাজ দেননা। তাদের আয়-রোজগারের কোনো সুযোগ নেই। সামাজিকভাবে তাদেরকে সবাই ভিন্ন চোখে দেখেন। অন্যদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেননা। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা এসব করছেন। তবে, এটাকে চাঁদাবাজি বলতে রাজি নন তাঁরা।”

তাঁরা জানান, “নগরীতে অনেক ‘নকল’ হিজড়া আছে। যাদের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিনা পরিশ্রমে অর্থ উপার্জন করা। মূলত তাঁরা পুরুষ। কিন্তু হিজরা সেজে টাকা আদায় করছেন তাঁরা। আসল হিজরারা এসবের বিরোধিতা করেন। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার হিজড়াদের একটি পৃথক লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।”

এবিষয়ে কথা হয় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী আখতার কবির চৌধুরীর সাথে। তিনি “বলেন, তাদেরকে নিয়ে সরকারের একটি মেগা পরিকল্পনা করা প্রযোজন। তাদেরকে পূনর্বাসন করতে হবে। কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আর এসব করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তবেই তাঁরা চাঁদাবাজি থেকে সরে আসবে।”
 
তবে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) শামসুল আলম সাফ জানিয়ে দেন, “আইন সবার জন্যই সমান। হিজরা সম্প্রদায় যদি চাঁদাবাজি করে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আসতে হবে। এসময় সিএমপি'র অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তবে চট্টগ্রামে হিজরাদের নিয়ে অভিযোগ আজকেই প্রথম শুনলাম।”

এসএ/