৩ মেরুকরণে ১০ই ডিসেম্বর!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:২৮ পূর্বাহ্ন, ৮ই ডিসেম্বর ২০২২


৩ মেরুকরণে ১০ই ডিসেম্বর!
জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি| প্রতীকী ছবি

দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দীর্ঘ ১৪ বছর ক্ষমতার বাহিরে থাকা জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দুই মেরুকরণে, অন্যদিকে দেশের জনগণের জান-মাল নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেশজুড়ে। যেকোনো কিছুর মূল্যে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সামনেই গণ মহাসমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের স্ব অবস্থানে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। 


অপ্রীতিকর কোন ঘটনা বা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে বিষয়টি সামনে রেখে ঝটিকা তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপি থেকে দাবি করা হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরতে, ভয়-ভীতি সৃষ্টি করতেই, মিথ্যা হয়রানি মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে বাংলাদেশে ভ্রমণের বিষয়ে নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। মঙ্গলবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিতে এ সতর্কতার কথা জানানো হয়।


সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ‘ঢাকায় রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গণপরিবহন, যোগাযোগব্যবস্থা ও শহরে চলাচলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সমাবেশের আগে ও পরে কয়েক দিন ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি হতে পারে। তাই আপনাদের রাজনৈতিক সমাবেশ ও বড় জমায়েত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির মহাসমাবেশ সমাবেশে পরিণত হয়। আর আমাদের সমাবেশ মহাসমাবেশে পরিণত হয়।


কাদের বলেন, বিএনপি ১৩ বছরে ১৩ মিনিটও রাজপথে দাঁড়াতে পারেনি। এখন শেখ হাসিনা উদার হয়েছেন। সবাইকে কর্মসূচি পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন।


সেজন্য বিএনপি ১০ ডিসেম্বরের হাঁক-ডাক দিচ্ছে। বিএনপির আগুন সন্ত্রাস, লাঠির বিরুদ্ধে এবার খেলা হবে। ভোট চুরি, ভোটার জালিয়াতির বিরুদ্ধে খেলা হবে।


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়ে দিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, নয়াপল্টনেই অনুষ্ঠিত হবে। মির্জা ফখরুল হুঁশিয়ার করে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।


অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে কেউ যেন প্রবেশের চেষ্টা করতে না পারে সেজন্য রাজধানীর প্রবেশপথে যানবাহন ও পণ্য বোঝাই ট্রাকেও তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।


বিএনপির সমাবেশ সম্পর্কে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, সমাবেশটি পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে কি না, তা সরকারের সিদ্ধান্ত। 


তিনি বলেন, 'আমরা ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা প্রস্তুত আছি।' ডিএমপির কাছে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে বিএনপি।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের অবস্থানের পেছনে রাজনৈতিক অনেক মেরুকরণ রয়েছে।


তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ আন্দোলন শুরু করেছিল, তখন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মঞ্চ তৈরি করে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী করেছিল আওয়ামী লীগ। সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করতে বাধ্য হয়েছিল বিএনপি।


আবার ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়ার পর তারাও অবস্থান নিয়েছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করতে হয়।


আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা আশঙ্কা করছেন, বিএনপিকে যদি মাঠ ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে হয়তো সেরকম কোন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


তবে দুই দলের এমন মুখোমুখি অবস্থান ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এই ৩ মেরুকরণে দেশের মানুষ বিরাজমান শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়।


আরএক্স/