বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে হবে ফাইনাল খেলা : কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, কত হাকডাক, সরকার পতনের কত যে দিবা স্বপ্ন। কত যে রঙিন ফোয়াব। কি খেলা শেষ হয়ে গেছে? কোয়ার্টার ফাইনালে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ। সামনে সেমি ফাইনাল, তারপরে নির্বাচলে ফাইনাল খেলা। তাতেও আসবে জয়। বাংলাদেশে আন্দোলনে যারা হারে নির্বাচনে তারা বিজয়ী হতে পারেনা।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বেলা ১১টার দিকে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু। উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ।

সম্মেলন শুরুর আগে দুপক্ষের চেয়ার ছোড়াছোড়ির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার দুংখ টেলিভিশনে শুনলাম চুয়াডাঙ্গায় ধাওয়া পালটা ধাওয়া। চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরুতেই। এখন তো দেখছি শীত কালের সমুদ্রের মত শান্ত। মনে হচ্ছে শীতের বঙ্গোপসাগর। এই মুহুর্তে পদ্মা নদীতে ঢেউ নেই। কেন শান্ত হলো এই পরিবেশ? কি কারণে? ১৫ টি জেলা সম্মেলনে কোথাও কিছু হলো না, এখানে (চুয়াডাঙ্গায়) কেন এই ধরণের গোলমালের সুত্রপাত হলো। সম্মেলনে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের তদন্ত করে বের করতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের শৃংখলা নষ্ট করবে তাদের আওয়ামী লীগের কোন দরকার নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বিজয়ী মিছিল করবে ১০ তারিখ। ১০ ডিসেম্বর তো চলে গেলো। আতঙ্ক সৃষ্টি করা হলো। বিআরটিসি বাস পোড়ানো হলো। শতশত চালের বস্তা সঙ্গে বিস্ফোরক পাওয়া গেলো নয়াপল্টনে। সব কিছু অচল করে দেবে বিএনপি। এখন তারা নিজেরাই অচল। ১০ দফা দাবি নতুন দেখলাম না, এটা পুরোনো কথা, পুরোনো গল্প, পুরনো দাবি, নতুন করে নাটক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত ঘোষনা করেছে। এরপরও আমরা খতিয়ে দেখছি মেনে নেওয়ার মতো কোনো দাবি আছে কি-না।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, এমন প্রধানমন্ত্রী আমরা দেখেনি। তিনি শাষক নন, তিনি সেবক। ৭৫ এর পর রাজনীতিতে শেখ হাসিনার মত ভালো, সৎ, সাহসী ও জনপ্রিয় নেতা আর একজনেরও নাম বলতে পারবেনা।

রিজার্ভ বিষয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের রিজার্ভ পাঁচ মাসের আমদানির মত রিজার্ভ আছে। তিন মাসের রিজার্ভ জমা থাকলেই দেশ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে থাকে। এই নিয়ে সমালোচনা। বিদ্যুৎ নিয়েও এতো কথা। সারা বাংলায় শতভাগ বিদ্যুৎ দিলেন। সেই বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলেন যারা, এই বিশ্বকাপে (কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল) ৯ টার, ১ টায়, বিকেল ৪ টায় প্রতিদিন ৩/৪ টা খেলা হয়েছে, সারা বাংলাদেশে কোথাও লোডশেডিং হয়েছে এ কথা চুয়াডাঙ্গার লোকেরাও বলতে পারবে না। এই সংকটেও আমরা সব ঠিক রেখেছি।

এদিকে সম্মেনলের শুরুর আগে আসন নিয়ে দুপক্ষের চেয়ার ছোড়াছোড়ির ঘটনা ঘটে। এতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক সহ ৬ জন আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ফিরোজ জোয়ার্দ্দার, সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক রাজু আহম্মেদ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেক ও ছাত্রনেতা হীরক ও স্বপন আহমেদ।

আহত হিরোক বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলন সফল করার জন্য মাঠেই কাজ করছিলাম। এসময় মাফিজুর রহমান মাফির নেতৃত্বে তাবু, তাওরাত, প্লাবনরা সংঘবন্ধভাবে আমাদের প্রতিরোধ করেন। এবং আমাদের নেতা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের উপর চেয়ার নিক্ষেপ করে তারা। আমরা প্রতিরোধ করার সময় আমরাও আহত হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. এহসানুল হক তন্ময় বলেন, মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক ও হিরকের মাথা ও তারেক হাসানের হাতের একটি আঙ্গুল আঘারপ্রাপ্ত হয়েছে। সেখানে সেলাই প্রদান করা হয়েছে। তারা শঙ্কামুক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সম্মেলনকে আসন নিয়ে দুইটা গ্রুপ হয়েছিল বলে ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে জেনেছি। কাদেরকে কোথায় কখন মারধর করেছে, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এই আমার জানা নেই। খোজ নিয়ে দেখতে বলে বলে জানান তিনি।

সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এড. আমিরুল আলম মিলন এমপি, পারভিন জামান কল্পনা ও এড. গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা এমনিসহ অন্য নেতারাও এতে বক্তৃতা রাখেন।

আরএক্স/