ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:২১ অপরাহ্ন, ৩রা জানুয়ারী ২০২৩

ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষনেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। শুরুতেই উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।
গৌরব, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ৭৫বছরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ নিয়েছে নানা কর্মসুচী। শেখ হাসিনার মিশন ও ভিশন বাস্তবায়ন করতে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনে ছাত্রলীগ সৃষ্টি হয়েছে,সময়ের প্রয়োজনেই ছাত্রলীগ টিকে থাকবে। আমি থাকি বা না থাকি, আমরা থাকি বা না থাকি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ টিকে থাকবে যতদিন এই বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে টিকে থাকে।
‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। শীতের রাত নিয়ে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের একটা চরণের কথা মনে পড়ছে—‘এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা,কিংবা প্যাঁচার গান; সেও শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো’এমনই সুন্দর কোনো এক পৌষের রাতেই বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ তো শুধু একটি ছাত্রসংগঠন নয়, মহাকালের ইতিহাস সৃষ্টিকারী একটি নাম। একটি স্বাধীন জাতির সব অর্জনের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে আছে তার নাম।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হয়। তখন আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ডটির নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। বাঙালি অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকলেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আমাদের শোষণ করতে চেয়েছে বারবার। যে রাষ্ট্র গঠনে আমাদেরও ভূমিকা ছিল, রাতারাতি তারা যেন হয়ে গেল সেই রাষ্ট্রের মালিক, আমরা গোলাম। তাদের সীমাহীন বৈষম্যের শিকার হয়েছি আমরা। বঞ্চিত হয়েছি মৌলিক অধিকার থেকেও। সেই শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় আর শোষণের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করতে সময়ের তাগিদেই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করেন ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ছাত্রসমাজের ডাকা হরতালের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অবদান রাখতে শুরু করে। এরপর ১৯৫১ সালের আদমশুমারি চলাকালে সারা দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাংলা ভাষার পক্ষে মতামত দিতে জনসাধারণকে প্রাণোচ্ছল করে। এরপর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনী প্রচারে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৫৮ সালে আইয়ুবের সামরিক শাসনের প্রতিবাদে ছাত্রলীগই প্রথম রাজপথে সোচ্চার হয়। ১৯৬২ সালের শিক্ষা-আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ও ছাত্রলীগের ১১ দফা, অতঃপর ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হতে ছাত্রলীগের অবদান ছিল মাইলফলক। এ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সাড়ে ১৭ হাজার ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আত্মাহুতি দিয়েছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর পিতাহীন বাংলাদেশ বারবার গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। সে সময়গুলোতেও ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছে। ১-১১-র অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে শত শত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে চরম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের নৈরাজ্য, বিএনপির আগুন-সন্ত্রাস, জামায়াতের জঙ্গি ঠেকাতে সোচ্চার ছিল ছাত্রলীগই। এ ছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পাহারা দিয়েছে পূজামণ্ডপ, করেছে রাস্তা মেরামতের কাজও, পরিবেশ রক্ষার জন্য লাগিয়েছে হাজার হাজার গাছ। দাঁড়িয়েছে বন্যার্ত, শীতার্ত মানুষের পাশে,করোনা রোগীদের লাশ দাফন,করোনাকালীন সময়ে ছাত্রলীগ ই সম্মুখ সারীর যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে।কখনো করেছে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আবার কখনো ছুটে গেছে কোনো অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। আসলে সব সময় ভালো কিছু করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
একটি জাতি শিক্ষাদীক্ষায় যত এগিয়ে উন্নয়নেও তত এগিয়ে। শুধু তা-ই নয়, উন্নয়নকে ফলপ্রসূ ও উন্নয়নের শতভাগ সুবিধা সবার মধ্যে পৌঁছে দিতে সবার আগে দরকার শিক্ষিত জনগণ। । বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়নের জোয়ার চলছে। উন্নয়নের সব সূচকে এরই মধ্যে আমরা দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, অনেক উন্নত দেশকেও পেছনে ফেলেছি। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, সামনের দিনগুলোতে যে ১০টি দেশ বিশ্ব-অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তার করবে তাদের একটি হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন চলছে সেটাকে আরো কার্যকর করতে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরব, অহংকার, সোনালী অতীতের ধারক-বাহক হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শিক্ষা শান্তি প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে বর্তমান নেতাকর্মীদেরদের প্রতি আহ্বান জানাই- আপনাদের কোন কর্মকাণ্ডে যেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ঐতিহ্যে আঁচড় না লাগে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার কর্মী। আবারো ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
আরএক্স/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

তারেক রহমানকে চীন সফরে আমন্ত্রণ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির

শহীদদের দলীয়করণ করলে তাদের অবমূল্যায়ন করা হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

খেলাধুলা ও ক্রীড়াঙ্গন রাজনীতি মুক্ত থাকা উচিত : মির্জা ফখরুল

তারেক রহমানের দেশে ফেরার নেপথ্যে নিরাপত্তা ও নির্বাচন
