হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ পিএম, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রী

ফুলবাড়ী প্রতিনিধি: বাঁশ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। বাঁশ দিয়ে ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো।আর এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালো। একসময় গ্রামের ঘরে ঘরে বাঁশ শিল্পের দেখা মিললেও এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্লাস্টিক পণ্য। প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতায় বাঁশ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ শিল্পের ঠিকানা এখন জাদুঘরে।

এক সময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামীণ পল্লিতে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি , চালুনি,মাছ ধরার ঘুনি,বানে মাছ রাখার খালই, ঝুড়ি ও হাঁস-মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। আর হাটবারে স্থানীয় বাজারে এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ-বেতের পণ্য বিক্রি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ বাঁশ-বেতের কারিগররা। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর গ্রামের বাঁশ শিল্প কারিগর ফজলু হক(৫৫) বলেন, ‘বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্যের উপর ঝুঁকছে লোকজন। ফলে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঁশ-বেত শিল্পের দুর্দিন কাটিয়ে সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।’

বাঁশ তৈরীপণ্য সামগ্রী বিক্রেতা আফতার আলী (৫৫) জানান,একসময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল ব্যাপক। বর্তমান প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প।’

বাঁশ শিল্পের কারিগর আলতাব মামুন বলেন, ‘কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় আমরা এখন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। শত প্রতিকূলতার মধ্যে পুরোনো পেশা ধরে রাখতে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় পুঁজি আর উপকরণের অভাবে সে প্রচেষ্টা থমকে গেছে।

তিনি আরো বলেন,করোনা মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। করোনার কারণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেকের কমেছে আয়। যে কারণে মানুষ কোনো কেনাকাটা করছে না।করোনার থাবায় গত বছরের ন্যায় এবারও বেচা-বিক্রিতে কোনো প্রাণ নেই।

সরেজমিনে ,উপজেলার বালারহাট, ফুলবাড়ী হাট, খরিবাড়ী হাট, নেওয়াশী হাট ,গংগাহাট, কাশিপুর হাট, বেড়াকুটিহাট ও চিলাখানা হাটগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশে তৈরী সব রকমারি পণ্য সামগ্রী পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন চাঁই ১০০ থেকে ১২০ টাকা, টেঁপাই ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ,খলাই ৫০ থেকে ৮০ টাকা , পিটুয়া ১৫০ টাকা ও ঝাঁপি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, কুলা ৫০ টাকা, চালন ৫০ টাকা, ঢুলি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, টুকরি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ঢালী ১০০ টাকা , ঝাঁড়– ৪০ টাকা, ঘোড়পা ১০০ টাকা ,ধারা ১৫০ টাকা, কবিতরের ভাসা ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।