পড়ে আছে শিশুদের ব্যাগ-বই-খাতা, বাতাসে পোড়া গন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৭ পিএম, ২২শে জুলাই ২০২৫

উত্তরার দিয়াবড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এখন যেন নিঃশব্দ এক মৃত্যুপল্লি।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এই ভয়াবহ ঘটনায় স্কুলজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, নিঃস্তব্ধতা আর অজস্র প্রশ্ন।
দুর্ঘটনার পরের দিন মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, স্কুলের প্রাইমারি শাখার সামনের ভবনজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভীষিকাময় ঘটনার চিহ্ন। তৃতীয় শ্রেণির ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’, ‘বাংলা ব্যাকরণ’সহ একাধিক বই অর্ধেক পুড়ে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। মলাটে লেখা শিশুদের নাম এখনো দৃশ্যমান। কোথাও পুড়ে যাওয়া খাতা, কোথাও ভাঙা পানির বোতল, ব্যাগ, এমনকি শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি—সব মিলিয়ে চারদিকে শুধু পোড়া গন্ধ আর বেদনার স্মৃতি।
এই ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে, যদিও এখনো পর্যন্ত হতাহতের চূড়ান্ত সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, যিনি নিজেও উদ্ধারকাজে অংশ নেন, বলেন, “আমি ছোটদের আর্তনাদ শুনে দৌড়ে এসেছিলাম। ধোঁয়ার ভেতর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। যারা বাঁচতে পেরেছে, তারাই বলছে—ভেতরে বের হওয়ার পথ খুঁজে পায়নি।”
অভিভাবক নাজনীন সুলতানা, যিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, বলেন, “এগুলো আমাদের সন্তানের বই। গতকাল পর্যন্ত তারা এখানে পড়াশোনা করছিল। আজ শুধু ছাঁই আর ধোঁয়া। স্কুল তো নিরাপদ জায়গা হওয়ার কথা, কিন্তু তা আজ মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, বিমানটি দুপুর ১টার কিছু পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ভবনের ওপর গিয়ে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুনে স্কুলের একটি অংশ সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত: প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বিমানটি প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এই ঘটনায় সারা দেশে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ শোক জানাচ্ছে, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।
আরএক্স/