দেব-দেবীর অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে লোহার খাঁচায় ঢুকতে হয়েছে: ড. ইউনূস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৯ অপরাহ্ন, ২রা জুন ২০২৪
দেব-দেবীর অভিশাপে আমি অভিশপ্ত। তাই আমাকে লোহার খাঁচায় ঢুকতে হয়েছে। অভিশপ্ত জীবনটা বড় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অপমানের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে লোহার খাঁচায় ঢুকতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (২ জুন) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ সৈয়দ আরাফাত হোসেনের আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের চার্জগঠনের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত আগামী ১২ জুন আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
মামলার শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটা আমার জীবনের একটা স্মরনীয় ঘটনা যে লোহার খাঁচার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম আদালতের কাঠগড়ায়। এটা অভিশপ্ত জীবনের একটা অংশ। আমার নোবেল পুরস্কারের কথা সবাই জানেন। দুইটা নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। একটা ছিলো আমার নামে, আরেকটা গ্রামীন ব্যাংকের নামে। দুইটারই সমান গুরুত্ব ও মর্যাদা। কারো চেয়ে কোনটা কম নয়। এটা যৌথভাবে দেয়া হয়েছে তাও না। দুইটায় স্বাধীনভাবে দেয়া হয়েছে।
এ নোবেলজয়ী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নজীর নাই, একজন নোবেল বিজয়ী আরেকজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে মামলা করতে দুদকে হাজির হয়েছে। এটা আমাদের কপালে হলো। এটা অভিশাপের একটা অংশ। যে অভিশাপ আমরা গ্রহণ করে যাচ্ছি। সে অভিশাপ এমনভাবে হয়েছে একটা নোবেল বিজয়ী এবং এ নোবেল বিজয়ী হলো খুবই সম্পৃক্ত নোবেল বিজয়ী। অনেকটা পিতা পুত্রের মত সম্পর্কে মত নোবেল বিজয়ী। যে আমার কারণে এটা সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। সেটাও আমার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পেয়েছে। এটারই একটা অংশ। যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে দুজনের মধ্যে একজন। এটা আমার বিরুদ্ধে এমনভাবে নিয়ে আসলো খুব কঠিন ভাষায়, রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করে।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ১২ জুন
তিনি বলেন, অভিযোগ থাকতে পারে কিন্তু রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করে অভিযোগগুলো করে। এবং যে অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে আপনাদের জানিয়েছি ঘটনা কি ঘটেছিল। এ ঘটনার মধ্যে কোনো সত্যতা তো নাই। যে জিনিস দিয়ে দিয়েছিলাম সেটার জন্য আমাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে টাকা মেরে দিয়েছি ইত্যাদি, ইত্যাদি। এ পর্যন্ত যত অভিযোগ এসেছে আমার এবং সহকর্মীদের বিরুদ্ধে তারা অভিশাপের একটা অংশ। এটা আমার কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। যে আমার বাবাকে আক্রমণ করেছে, ভাই-বোনদের আক্রমণ করেছে। এই যে সেটা অভিশপ্ত জীবনের একটা অংশ বলে গেলাম।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এসময় কেন তাদের অভিশপ্ত জীবন বহন করতে হচ্ছে সেটা আপনারা জানুন এবং লিখুন। শুধু জানা নয়, কিছু লিখুন। সত্যতা, গুরুত্বটা, ভূমিকাটা কি? রিপোর্টিং বলতে শুধু শুনলাম, লিখলাম এটা না। এর একটা ব্যাখাও আছে। গভীরে যাওয়া, সবাইকে জানান দেয়া সেটাও একটা অংশ। সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
আরও পড়ুন: র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এর আগে এদিন মামলায় হাজিরা দিতে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আদালতে আসেন ড. ইউনূস। অন্যান্য আসামিরাও আদালতে হাজির হন। বেলা পৌনে ১১ টার দিকে মামলার শুনানি শুরু হয়। এর আগেই অন্য মামলার শুনানি চলছিল। মামলার শুনানির শুরুতে আদালতে বেঞ্চে বসে ছিলেন ড. ইউনূস। এসময় আসামিদের নাম ডাকা হয়। অন্যান্য আসামিরা ডকে প্রবেশ করতে থাকেন। ড. ইউনূসের নামও ডাকা হয়। আইনজীবীরা তাকে বেঞ্চে বসে থাকতে বলেন। তখন তিনি বলেন, আমার সহকর্মীরা ডকে ঢুকেছে। আমিও যাবো। পরে তিনি আসামিদের জন্য তৈরি লোহার খাঁচায় প্রবেশ করেন। ১০ মিনিট থাকার পর বিচারক তাদের বেঞ্চে বসার অনুমতি দেন। পরে সব আসামিরা সেখান থেকে বের হয়ে আসেন।
জেবি/এসবি