Logo

অকুলিনের বিদ্যুৎ খাতে সাগর চুরি দুর্নীতি

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ২৩:৫১
48Shares
অকুলিনের বিদ্যুৎ খাতে সাগর চুরি দুর্নীতি
ছবি: সংগৃহীত

শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের রাজত্ব চালাতে শাদাব

বিজ্ঞাপন

# ডিপিডিসির ও নেসকো এএমআই প্রকল্পে অনিয়ম

# নেসকোর ১২ লাখ প্রিপেইড মিটার অকুলিনের কব্জায় 

# ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাব এবং চীফ টেকনিক্যাল রুম্মান পলাতক

বিজ্ঞাপন

শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের রাজত্ব চালাতে শাদাব সাজিদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পায় অকুলিন টেক বিডি লিমিটেড। তিনি শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বন্ধু। সেই সূত্র ধরে বিদ্যুতের ও আইটি সেক্টরের এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে কাজ করেনি অকুলিন। তবে কাজের নামে অকাজই হয়েছে সবখানে। কিভাবে নামসর্বস্ব প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন দেখিয়ে অর্থ লুট করা যায়, সেই ধান্দায় ব্যস্ত থেকেছে কথিত প্রতিষ্ঠানটি। মূলত এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেহানা ও ববিসহ আওয়ামী ঘেষা অনেক মন্ত্রী-এমপি এবং আমলা তাদের দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এবার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অকুলিনের প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সাগর চুরির ভয়াবহ চিত্র।

বিজ্ঞাপন

ডিপিডিসির এএমআই প্রকল্পে যতো অনিয়মঃ ডিপিডিসি প্রকল্পের শুরু থেকে ব্যাপক অনিয়ম হয় এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে গিয়ে। বিভিন্ন শর্ত জুড়ে টেন্ডার করা হয় যাতে শুধুমাত্র দুই দরপত্রদাতা অংশগ্রহণ করে। কথিত আছে এই দরপত্র অকুলিনেরই বানানো। নামসর্বস্ব এই টেন্ডারে অকুলিনই সর্বনিম্ম দরদাতা হয়। তাদের দাম ছিলো চারশত গুণ বেশি। পরবর্তীতে আবার বাজেট সংশোধন করে আবারো টেন্ডার করে অকুলিনকেই কাজ দেওয়া হয়। 

এই ফাইল অনুমোদনের জন্য ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের চাপ দেন খোদ তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান। অনেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন এই শ্বেতহস্তি প্রকল্পের ফাইল সই করতে। বারবার কমিটি বদল করা হয়। কিন্ত শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ অফিসার প্রধানমন্ত্রী অফিসের রেফারেন্সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রকল্পটি পাশ করতে বাধ্য হয়।

বিজ্ঞাপন

ডিপিডিসি মিটার প্রকল্পে ইউরোপীয়ান ল্যান্ডিস এন্ড গিয়ারের অত্যাধুনিক মিটার সরবরাহের কথা থাকলেও মিটার প্রস্তুত হয় চীনে। মিটার কমিউনিকেশনের নিক কার্ড সরবরাহ করা হয় ভারতের। পুরো প্রকল্প তদারকি করেছে ল্যান্ডিস এন্ড গিয়ারের কয়েকজন ভারতীয় প্রতিনিধি। তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহবান করা হয়। প্রতিটিতেই ঘুরে-ফিরে তিন কোম্পানির মিটার। দফায় দফায় প্রকল্পের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। এই প্রকল্পের সিস্টেম আজ অবধি অকার্যকর। মিটারগুলো পোস্টপেইড মিটারের মতো করে চলছে।  

বিজ্ঞাপন

নেসকো এএমআই প্রকল্পঃ নেসকোতে ১২ লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্প অকুলিন টেক প্রথম প্যাকেজ থেকেই কব্জায় করে নেয়। অকুলিনের প্রভাবে মিটার প্রকল্পে যোগ হয় ডাটা সেন্টার। টেন্ডার দলিল প্রস্তুত হয় অকুলিনের প্রেসক্রিপশনে। উচ্চ মূল্যে মিটার, সিস্টেম, ডাটা সেন্টার, এমনকি মিটার প্রতি ওরাকল লাইসেন্স কেনা হয় অকুলিন থেকে। তিনটি প্যাকেজেই কাজ পায় মিটার কোম্পানী শেনঝেন স্টার ও ওয়াশিয়ন। এরপরের প্যাকেজগুলোতে পূর্বশর্ত দেওয়া হয়ে থাকে নেসকোর সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হতে হবে। আদতে সেই সিস্টেম কার্যকরই হয়নি। 

অকুলিনের সরবরাহকৃত মিটার ডাটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারে আজ অবধি একটি মিটারও অনলাইন হয়নি। তারা না পেরে বেঙ্গালুরু ভিত্তিক একটি কোম্পানীকে সিস্টেম চালানোর কাজ দেয়। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। দুই মিটার কোম্পানীর দুই সিস্টেমে বর্তমানে মিটারগুলো চলছে। এসকিউ ও অকুলিন টেকের ছায়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান নেসকো দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে বা কাজ পেতে পারেনি। গ্রাহকেরা অভিযোগ করে আসছেন তাদের সরবরাহ করা মিটারে বিল বেশি আসে। মিটারগুলো স্মার্ট নয়। প্রায় হাজার কোটি বা তারও বেশি টাকা ব্যয়ের পরও কার্যত কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। নথিপত্র পর্যালোচনা করলেই চরম অনিয়মের বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যাবে।

বিজ্ঞাপন

শুধু এই দুটি সেক্টরেই নয়, অকুলিন টেক বিডি লিমিটেড যেখানেই কাজ করেছে, সেখানেই দুর্নীতি করেছে। দেশের টাকায় কেনা তাদের থেকে কেনা কোনো সিস্টেম কার্যকর হয়নি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কখনো ধরা পড়তে হয়নি তাদের। উল্টো তাদের দুর্নীতি ওপেন-সিক্রেট থাকলেও কেউ টু-শব্দ করার সাহস করেনি। কারণ, এর পেছনে ছিল স্বৈরাচার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টতা।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই গজিয়ে ওঠা কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাব সাজিদ এবং চীফ টেকনিক্যাল অফিসার রুম্মান আক্তার দেশের বাইরে পলাতক। অকুলিন টেকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম বর্তমানে বাংলাদেশে থেক্র তাদের কার্যক্রমের কান্ডারি হিসেবে কার্যক্রম চালালেও দেশে না থাকার অভিনয় করছেন। প্রচুর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাটাই করা হয়েছে। অনেককে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের জুনিয়র কিছু কর্মচারী এখন চুক্তিবদ্ধ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে। 

সরকারী বেশীরভাগ সংস্থা তাদের সাথে চুক্তি বাতিল করতে উদ্যোগ নিয়েছে। অনেকে যতোটুকু কাজ হয়েছে সেই পর্যন্ত বিল দিয়ে চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চাইছে। কিন্তু প্রচ্ছন্ন চাপ, ক্ষমতা ও অর্থ প্রলোভন দিয়ে তাদের দমিয়ে রাখা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে ওকুলিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাদাব সাজিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ওকুলিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হামান ইমাম এর মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। বরং ক্ষুর্দে বার্তা পাঠিয়ে উত্তর মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

আরএক্স/

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD