রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি আজ টিকে আছে শুধু স্মৃতির ভরসায়

পুরান ঢাকার ব্যস্ত পথ ধরে হাঁটলে নজরে আসে এক জরাজীর্ণ ভবন ‘রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি’। একসময় এটি ছিল ঢাকার প্রথম পাঠাগার, আজ কেবল স্মৃতির ভরসায় টিকে আছে।
বিজ্ঞাপন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের লাগোয়া এই পাঠাগার একসময় ছিল জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র।
লাইব্রেরিটির শুরুর দিনগুলো ছিল সমৃদ্ধির প্রতীক। এখানে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি বইয়ের সংগ্রহ ছিল, বিশেষ করে ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কিত বই। শত শত পাঠক এসে বই পড়তেন, আলোচনা করতেন। এমনকি বাংলা সাহিত্যের মহান ব্যক্তিত্বরা এখানে আসতেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শহীদুল্লাহ, সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান পর্যন্ত। ১৮৯৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকায় এসে যেসব জায়গার নাম করেছিলেন, তার একটি ছিল এই পাঠাগার।
কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনারা এখানে হামলা চালায় এবং বহু মূল্যবান বই লুট হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এর বইয়ের সংখ্যা নেমে আসে মাত্র কয়েক শতে। এখন আনুমানিক ৩০০-৪০০ বই রয়েছে পাঠাগারে।
বিজ্ঞাপন
রাজা রামমোহন রায়ের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮৭১ সালের ২০ জানুয়ারি অভয় চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানেই শতবর্ষ ধরে চলেছে জ্ঞানচর্চা, ধর্মীয় দর্শন ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম।
বর্তমানে লাইব্রেরিটি ব্রাহ্ম মন্দির ভবনের দোতলায় সীমিত জায়গায় চালু রয়েছে। ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে বিভিন্ন সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতি সুকান্ত ভট্টাচার্য, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সুফিয়া কামাল, নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশসহ আরও অনেকে।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা ও বইয়ের অভাব এই ঐতিহ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। রাজউক ২০০৪ সালে ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দিলেও পরে তা স্থগিত হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে ভবনটিকে ‘পুরাকীর্তি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। ফলে পুনর্নির্মাণ বা সংরক্ষণ এখনো অনিশ্চিত।
স্থানীয়রা বলছেন, রাজা রামমোহন রায় পাঠাগার কেবল পুরান ঢাকার গর্ব নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। তাদের দাবি, জরাজীর্ণ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে পাঠাগারটিকে নতুন প্রাণ দিতে হবে।
একসময় যে পাঠাগার ছিল আলোচনার, জ্ঞানচর্চার ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু, আজ তা দাঁড়িয়ে আছে অবহেলায়। রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি কেবল একটি ভবন নয়, এটি পুরান ঢাকার শিক্ষাজীবী ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অমূল্য সাক্ষী। যা সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।


