খোশ আমদেদ হিজরি নববর্ষ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


খোশ আমদেদ হিজরি নববর্ষ

আজ হিজরি সনের প্রথম দিন। স্বাগতম ১৪৪৪ হিজরি। হিজরি সনের সূচনা ও বিদায় ঘটে নীরবে নিঃশব্দে। যতদূর জানা যায়, আরব দেশগুলোতে ঘটা করে উদযাপন করা হয় হিজরি নববর্ষ। তবে আমাদের এ অঞ্চলে খুব একটা দেখা যায় না।

মুসলিম হিসেবে হিজরি নববর্ষ উদযাপন কিংবা মুসলিমদের গৌরবের দিনটি পালনের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতিতে ব্যাপকতা লাভ করেনি। ধর্মীয় কিছু দিবস ছাড়া আমরা হিজরি সন সম্পর্কে খুব একটা জানি না বা জানার চেষ্টাও করিনা। আমরা অনেকেই জানি না যে, মুসলিমদের নববর্ষ কোন মাসে হয়? আবার কেউ হয়ত বা হিজরিবর্ষ গণনার সঠিক ইতিহাসও জানি না। এর প্রতি মানুষ আকর্ষণও অনুভব করেন না, তা খুবই দুঃখজনক।

মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে যে কোনো সন তারিখ নির্ধারণ করতে পারে। তবে হিজরি সন তারিখের আছে বিশেষ গুরুত্ব। রাসূলে পাক (সা.)-এর তিরোধানের পর বিভিন্ন প্রয়োজনে বয়োজ্যেষ্ঠ সাহাবাদের পরামর্শে হিজরি সনের প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু আরবি মাসসমূহের প্রবর্তন পৃথিবীর সূচনা থেকে।

পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহর নিকট গণনার মাস বারোটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। কাজেই-এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ৩৬) অনুরূপ হাদিস শরীফ  থেকেও প্রমাণিত, যা সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে।

এ চারটি সম্মানিত মাসকে চিহ্নিত করতে গিয়ে নবী করীম (সা.) বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মুহররম এবং অপরটি হলো রজব। (তাফসীর ইবনে কাসির)।

এ আয়াত দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর দৃষ্টিতে শরিয়তের আহকামের ক্ষেত্রে চন্দ্র মাসই নির্ভরযোগ্য। চন্দ্র মাসের হিসাব মতেই রোজা, হজ ও জাকাত প্রভৃতি আদায় করতে হয়। তবে আল্লাহপাক কুরআন মজিদে চন্দ্রকে যেমন, তেমনি সূর্যকেও সাল তারিখ ঠিক করার মানদন্ডরূপে অভিহিত করেছেন।

 সুতরাং চন্দ্র ও সূর্য উভয়টির মাধ্যমেই সাল-তারিখ নির্দিষ্ট করা জায়েজ। তবে চন্দ্রের হিসাব আল্লাহর নিকট অধিকতর পছন্দনীয়। তাই শরিয়তের বিধি-বিধানকে চন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রেখেছেন। এজন্য চন্দ্র বছরের হিসাব সংরক্ষণ করা মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব।

ইসলামি শাসন ব্যবস্থার সময় সবকিছুর হিসাব হিজরি সন ধরে হতো। পরবর্তীতে সময়ের পরিবর্তনে এর ব্যবহার হ্রাস পায়। কিন্তু ইসলামি বিধি-বিধান আরবি মাসের হিসাবে আরোপিত। তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর ব্যবহার অব্যাহত থাকবে। হাদিস শরীফে নতুন চাঁদ দেখার দোয়াও বর্ণিত হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ত্যাগ ও কুরবানির ঐতিহাসিক স্মৃতিস্মারক হিজরি সন। ইসলামের প্রচার, প্রসার এবং বিজয় কেতন উড্ডীনে হিজরি সনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যাধিক। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের জ্ঞানপাপীরা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামকে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবী দ্বীন প্রচারে প্রিয় মাতৃভূমি ত্যাগ করে মাদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন। যাকে কেন্দ্র করেই আজকের হিজরি সন। যা আজো মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে আলোকবর্তিকা হিসেবে জাগরিত হয়ে আছে।

মনে রাখা জরুরি যে, হিজরি সনের প্রথম মাস মহরম। এ মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এই মাসেই আল্লাহ পাক অনেক ঘটনা সংঘটিত করেছেন, পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এই পবিত্রতম মাসে আবার আল্লাহপাকের হুকুমে এই মাসেই পৃথিবী ধ্বংস হবে। ফোরাত তীরে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনাও সংঘটিত হয়। তবে মুহররম মাস শুধুমাত্র কারবালার ঘটনা স্মরণ করার মাসই নয়, এ মাস গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার, ত্যাগের, ভালো কাজ করার, খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে গড়ার প্রতিজ্ঞা করার মাস। ইসলাম ও মুসলমানের জন্য এ মাসের রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় ও পালনীয় বিষয়। তাইতো এ মাসের ৯, ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখা উত্তম।

হিজরি নববর্ষ বিশ্ব মানবতাকে ইসলামের সুমহান আদর্শ ও ত্যাগের দিকেই আহবান করে। হিজরি নববর্ষ হয়ে উঠুক মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মুক্তির বছর। আসুন, হিজরি নববর্ষে ইসলামের আলোয় আলোকিত হই। বিগত দিনের অন্যায় ও গোনাহ থেকে মুক্তি লাভ করি। যে মহান উদ্দেশ্যকে স্মরণ করতে হিজরি সন শুরু হয়েছিল, আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে হিজরি বর্ষের সে উদ্দেশ্যের স্মরণ, মর্যাদা ও কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রাখার, আমলি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন।

এসএ/