কালকিনিতে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে সুফল পাচ্ছে কৃষক
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
এক ফসলি জমিকে দুই ফসলি, দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে মাদারীপুরের কালকিনিতে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফলতা অর্জন করেছে কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে অনাবাদি ও জলমগ্ন জমিতে এ বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে ইতোমধ্যেই আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন ডাসার ও শশিকর ইউনিয়নের অনেক কৃষক। কৃষি বিভাগের এ পরিকল্পনা সারা উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি স্থানীয় কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, নিম্নাঞ্চলের অনেক জমি বছরের প্রায় ৬ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এসব জমিতে কৃষকরা শুধু বোরো ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল ফলাতে পারে না। সেসব এক ফসলি জমিকে দুই ফসলি, দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৭ জেলায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি বিভাগ।
এ প্রকল্পের আওতায় জেলার কালকিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে ডাসার গ্রামের কৃষক সাইদুল কাজীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বস্তা পদ্ধতিতে লাউ চাষ কার্যক্রম শুরু করা হয়।
সাইদুলের এ পদ্ধতি দেখে তার গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী শশিকর ইউনিয়নের অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী হয়। পরবর্তী সময়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ডাসার ও শশিকরের ১৫-২০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণ শেষে কৃষকদের বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হয়। কৃষকরা তাদের যেসব জমি সারা বছর জলমগ্ন থাকে সেই জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে লাউ, করলা, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করে। কালকিনি উপজেলায় প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ হয়েছে।
কৃষকরা বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষের ক্ষেত্রে প্রথমে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ৩০-৪০ কেজি দোঁআশ মাটির সঙ্গে ১০-১৫ কেজি পচা গোবর সার মিশিয়ে নেন। এরপর ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি সার ও ৫০ গ্রাম বোরন সারের সঙ্গে ১ কেজি পরিমাণ শুকনো ছাই ও ২ কেজি ভার্মিকম্পোস্ট যোগ করে বস্তাটি তৈরি করেন। এ বস্তার মধ্যে সবজি বীজ রোপণ করার প্রায় ৪ মাসের মধ্যে বিক্রি উপযোগী সবজি ফলন হচ্ছে।
বর্তমানে কৃষকদের গাছে গাছে লাউ, করলা, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি ঝুলছে। ইতোমধ্যেই কৃষকরা সবজি বিক্রি শুরু করেছেন। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে কৃষকরা দুই থেকে তিনগুণ লাভবান হচ্ছেন। উপজেলার সব কৃষকদের মধ্যে এ পদ্ধতি সবজি চাষে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়। এলাকার বিভিন্ন কৃষকরা প্রতিনিয়ত সাইদুল কাজীসহ বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষিদের ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিদর্শন করে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছেন। সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঢাকা খামারবাড়ি প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ জাহিদুল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং জেলার সব কৃষকদের মধ্যে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
কালকিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিল্টন বিশ্বাস জনবাণী কে বলেন, বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ অত্র এলাকায় গত বছর থেকে শুরু হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য শস্য নিবিড়তা বাড়ানো। পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং সারা বছর যাতে সবজি পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করা।
মাদারীপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন জনবাণী কে বলেন, পানিতে নিমজ্জিত থাকে এমন জমিতে বা সেসব অঞ্চলের জন্য এ পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেসব এলাকায় বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য কৃষক ভাইদের উদ্বুদ্ধ করতেছি। গত বছর থেকে কালকিনিতে শুরু করেছি। আগামী দিনে জেলার সব এলাকায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করা হবে।