চাঞ্চল্যকর সাইদুর হত্যা মামলার প্রধান আসামী গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার চাঞ্চল্যকর সাইদুর হত্যা মামলার প্রধান আসামী নান্নু শেখ নূরনবীকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থেকে করেছে র্যাব-৪।
শনিবার (৬ অগাস্ট) র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার চাঞ্চল্যকর সাইদুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামী দীর্ঘ ০৭ বছর ধরে পলাতক নান্নু শেখ নূরনবী (৩৭), জেলা-মাগুড়া’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।
র্যাব-৪ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য আসামী গ্রেফতার করে যার মধ্যে সাভারের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন হত্যার রহস্য উদঘাটন পূর্বক আসামীদের গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার, সাভারের ক্লুলেস ফাতিমা হত্যা রহস্য উদঘাটন সহ অসংখ্য ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করা এবং আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়াও র্যাব-৪ ২০-৩০ বছর পলাতক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কয়েকজন দুর্র্ধষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গত কয়েকদিন পূর্বে ৩৯ বছর ধরে পলাতক হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী কাওছার (৬৩)’কে ঢাকার বারিধারা থেকে, অন্তঃসত্তা স্ত্রী হত্যা মামলায় ১৯ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী সিরাজুল'কে নারায়ণগঞ্জ থেকে, চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলায় ০৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী নজরুল'কে সাভার হেমায়েতপুর জয়নাবাড়ি এবং চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা আক্তার (২২) ও তার ৩ বছরের মেয়ে জোতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী জাকির হোসেন (৪৭)কে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন শাহিবাগ এলাকা থকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গত ১৮/১২/২০১৫ তারিখ সকাল ৯.০০ ঘটিকার সময় গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন দেওয়ানবাড়ীর ছায়াতল মার্কেটের পাশে ধানের জমিতে একটি গলাকাটা অজ্ঞাতনামা লাশ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনতা, স্থানীয় থানা-পুলিশ ও পরিবারের লোকজনের সহায়তায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে, অজ্ঞাতনামা লাশটি মোঃ সাইদুল ইসলাম (৩৮) এর। নিহত সাইদুল ইসলাম জয়দেবপুর থানাধীন কোনাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি কোম্পানিতে বাবুর্চি পদে চাকুরী করতো এবং উক্ত কোম্পানির স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করার পাশাপাশি ফ্যাক্টরির সামনে অস্থায়ী দোকান দিয়ে গেঞ্জি, প্যান্ট ও লুঙ্গি বিক্রি করতো।
ভিকটিম বিদেশে যাওয়ার জন্য ঘটনার একমাস পূর্বে চাকরি ছেড়ে দেয় এবং সেই সাথে তার অস্থায়ী কাপড়ের দোকানও বিক্রি করে দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামী নান্নু শেখ ভিকটিমের সাথে একই অফিসে চাকরি করতো এবং সেই সুবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী ভিকটিমের কাছে স্টাম্পের মাধ্যমে স্বাক্ষর করে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার হিসেবে গ্রহণ করে। ভিকটিম পরবর্তীতে পাওনা টাকা ফেরত চাইলে আসামী নান্নু শেখ তাকে বিভিন্নভাবে ঘুরাতে থাকে। পরবর্তীতে ১৭/১২/১৫ তারিখ রাত ৮.০০ ঘটিকার সময় জয়দেবপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় পারস্পরিক কথাবার্তার এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত আসামী নান্নু একটি মোটরসাইকেলযোগে এসে পাওনা টাকা দিবে বলে ভিকটিমকে তার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়।
এরপর থেকেই ভিকটিম সাইদুল ইসলাম এর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ভিকটিমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আসামী পাওনা টাকা পরিশোধ না করে রাতের অন্ধকারে ধানক্ষেতে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গাজীপুর জয়দেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয় যার নম্বর ৯৩(১২)২০১৫; ধারা ৩০২/৩৪ দন্ডবিধি। উক্ত ঘটনার পর থেকে আসামী নান্নু শেখ পলাতক ছিলো। সে আত্মগোপনের জন্য বিভিন্ন সময় নিজের নাম ও ঠিকানা গোপন করে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করতো। আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, সে উক্ত ঘটনা ছাড়াও আরো বেশ কিছু হত্যাকান্ড, ডাকাতি, জমি দখল এর মতো ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হন্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
আরএক্স/