নদী ভাঙা ছিন্নমূল মানুষের দূর্বিষহ জীবন-যাপন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নদী ভাঙা ছিন্নমূল মানুষের দূর্বিষহ জীবন-যাপন

পাবনার বেড়ায় সাম্প্রতিক নদীর ভাঙনে বসত বাড়ি, জমি-জমা হারিয়ে নি:স্ব হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে অন্যের জমিতে কোনো রকমে ঘর-দরজা উঠিয়ে শতাধিক পরিবার ঠাঁই নিয়েছে উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয় ইউনিয়নের চরনাকালিয়া নতুন পাড়া নামক গ্রামে। 

বুধবার (১৭ আগস্ট) নতুন পাড়া নামক ওই গ্রামে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল পরিবার গুলোর হাল-হকিকত সরেজমিনে দেখা ও জানার জন্য গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ছিন্নমূল পরিবারের নারী-পুরুষ শিশু কিশোর ঘিরে ধরে তাদের জন্য কোন ভালো খবর আছে কিনা জানার জন্য। 

সাংবাদিকদের দেখে তাদের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখা যায়। এ সময় এসব লোক জন তাদের বসত বাড়ি,গাছ-পালা,জমি-জমা যমুনা নদীর গর্ভে বিলীনের ভয়াবহতা ও সুখ-দুঃখের কথাগুলো বলতে থাকেন। 

সব কিছু হারিয়ে এসব পরিবারে লোকজন দিনমজুর, মাছধরা, অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করা আবার অনেকেই পরিবার পরিজন ফেলে রেখে ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রিকসা চালিয়ে জীবিকা-নির্বাহ করছেন। এ চরে আশ্রয় নেওয়া এসব ছিন্নমূল লোকজন খোলা জায়গায় খোলা পায়খানা ব্যবহার করছেন। 

তারা জানান,এখানে মল-মূত্র নিস্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক এবং বিশুদ্ধ পানির খুবই সংকট দেখা দিয়েছে। একটি মাত্র টিউবওয়েল থেকে এতো গুলো পরিবারের পানি চাহিদা পূরণ করতে তাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পানি পান করা সহ সংসারের বিভিন্ন কাজে এই টিউবয়েলের পানি তাদের ভরসা। 

ভিটে মাটি হারা এসব পরিবারের অনেকেই জানান ,এ পর্যন্ত হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন হতে মেম্বারের মাধ্যমে তিন দফায় ৩০, ২০, ১০ কেজি করে ত্রাণ সহায়তা তারা পেয়েছেন। আবার কিছু পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন,তারা এ পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি।
 
উল্লেখিত নতুন পাড়া গ্রামে এখনও উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধি পরিদর্শনে আসেননি। তবে মানবতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন চরনাকালিয়া গ্রামের উদার মনের কৃষক নবী মোল্লা, ইউনুস প্রামানিক, নজু মোল্লা, আ: আজিজ মোল্লা। নদী ভাঙা মানুষের দুঃখ ও কষ্ট দেখে তারা তাদের নিজেদের প্রায় ২০ বিঘা আবাদি জমি এসব ছিন্নমূল পরিবারের মাঝে বসবাসের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সরকারি খাস জমি বা যেন কোনো স্থানে তাদের কে পূর্ণ বাসনের ব্যবস্থা করা হয়,তার দাবি জানিয়েছেন চরনাগদাহ গ্রামের বাসিন্দা ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জাহিদ মোল্লা। তিনি বলেন,চরনাকালিয়া নতুনপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেওয়া পরিবার গুলোর সবাই হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের নয়,পাশর্^বর্তী চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের লোকজনের সংখ্যাই বেশী। 

ইউপি সদস্য আরও জানান, চরনাগদাহ ও চরনাকালিয়া গ্রামের যারা নদী ভাঙনে বসত বাড়ি, জমি-জমা হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রায় সবাই এপর্যন্ত সরকারি ভাবে নগদ টাকা সহ তিন দফায় ৩০, ২০ এবং ১০ কেজি করে চাল ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন।
 
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থদের বিষয়ে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আঃ হামিদ সরকার বলেন, আমার ইউনিয়নের চরনাগদাহ গ্রামে নদীর ভাঙনের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে আমি বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং পাবনা জেলা প্রশাসক মহোদয় কে অবহিত করে এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ভাঙন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সরকারি ভাবে নগদ দেড় লাখ টাকা সহ তিন দফায় খাদ্য শস্য চাল ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। তবে চরনাকালিয় নতুন পাড়া নামক গ্রামে আশ্রয় নেয়া ছিন্নমূল পরিবার সম্পর্কে আমি জানি না এবং এখন পর্যন্ত আমাকে কেউ অবহিত করেনি।

আরএক্স/