টানা বৃষ্টিতে উখিয়া ও টেকনাফের ৭০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:০৭ অপরাহ্ন, ৭ই জুলাই ২০২৫


টানা বৃষ্টিতে উখিয়া ও টেকনাফের ৭০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি
ছবি: প্রতিনিধি

টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার অন্তত ৭০ গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে উখিয়া উপজেলার ২০ গ্রাম এবং টেকনাফ উপজেলার ৫০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া উখিয়ার ৩ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টির তথ্য মিলেছে।


আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে ভাই খুন


কক্সবাজারে গত ৪ দিন থেকে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে সোমবার (৭ জুলাই) বেলা ১২ টা পর্যন্ত ৩০ ঘন্টায় ২২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করার তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান।


তিনি জানান, রবিবার সকাল ৬ টা থেকে সোমবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান ১৪৬ মিলিমিটার। সকাল ৬ টা থেকে বেলা ১২ পর্যন্ত আরও ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।


টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য মতে, টেকনাফে ভারী বৃষ্টিপাতে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কম হলেও ৫০  হাজার পরিবার বন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ৮টি গ্রাম, হ্নীলা ইউনিয়নে ১২টি গ্রাম, টেকনাফ পৌরসভার ৭টি গ্রাম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম, সাবরাং ইউনিয়নে ৭টি গ্রাম, বাহারছড়া ইউনিয়নে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।


হ্নীলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের চার হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এসব গ্রাম সমুহ হল, জালিয়াপাড়া, সাইটপাড়া, ফুলের ডেইল, আলী আকবর পাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, আলীখালি, চৌধুরী পাড়া, পূর্ব পানখালী, মৌলভীবাজার, লামার পাড়া, ওয়াব্রাং, সুলিশপাড়া ও পূর্ব সিকদার পাড়া। গ্রামগুলোর চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।


টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবদুল্লাহ মনির জানিয়েছেন, টেকরাফ পৌরসভার কলেজপাড়া, শীলবুনিয়া পাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়ার মানুষ এখন পানিবন্দি।পানিতে ডুবে আছে টেকনাফ কলেজসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। পৌরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু ঘরবাড়িসহ চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।


টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, টেকনাফ সদরের ৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এগুলো হল মহেশখালীয়া পাড়া, নতুন পাল্লান পাড়া, তুলাতুলি, লেঙ্গুরবিল, খোনকারপাড়া, মাঠপাড়া ও রাজারছড়া, জাহাঁলিয়া পাড়া।


একই সঙ্গে সাবরাং ইউনিয়নের  শাহপরীর দ্বীপের ৭টি গ্রামসহ ১০ গ্রাম এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বা বিল, উলুবনিয়া, আমতলি, মিনাবাজার, উনচিপ্রাং, কাঞ্চনপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, রইক্ষ্যং গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।


টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন , 'ভারী বর্ষণের ফলে কিছু গ্রামে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। পাশাপাশি পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। এজন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।


অপরদিকে উখিয়ায় টানা  ৪ দিন ধরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।  ২০টি গ্রাম  প্লাবিত  সহ সবজি ক্ষেত, বীজ তলা ও পানের বরজ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি  গ্রামীন  রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।


উখিয়া  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন সহ  এলাকায় দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ভরাট ড্রেইন পরিষ্কার করতে দেখা গেছে।


স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান,  টানা বৃষ্টির কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে।  পুকুর পানি ডুকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে।


উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুস্তাক আহমদ জানান, টানা বৃষ্টির কারণে এবারে আমন বীজ তলা নষ্টা হয়েছে।   হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুমখা চৌধুরী পাড়া,  কুলাল পাড়া, চর পাড়া,  রত্না পালংয়ের পশ্চিম রত্না, সাদৃকাটা, জালিয়া পালং ইউনিয়নের নম্বরী পাড়া, পাইন্যাশিয়া,  সোনাই ছড়ি, সোনার পাড়ার রেজু মোহনা, মন খালী ছেপট খালী  রাজা পালং ইউনিয়নের তুতুরবিল, পিনজিরকুল, মাছ কারিয়া, হরিণমারা হিজুলিয়া, ও পালং ইউনিয়নে রহমতের বিল আঞ্জুমান পাড়া, ধামন খালী সহ  নিচু এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।


আরও পড়ুন: ঈদে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল: ৭ দিনে ৪ লাখ ভ্রমণকারী, ৪ শত কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য


এদিকে গতরাতে  থাইংখালী - মোছারখোলা সড়কে অতি বৃষ্টির কারণে গাছ ভেঙ্গে পড়ে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ এবংযাতায়াতের ব্যবস্থা সম্পুর্নভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।


উখিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাউসার হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নামের তালিকা তৈরি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কে বলা হয়েছে।


এছাড়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৩ টি ক্যাম্পে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন।


এসডি/