বৌভাতে মাংসের পিচ ছোট, মদসহ নগদ টাকা জরিমানা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বৌভাতে মাংসের পিচ ছোট, মদসহ নগদ টাকা জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলায় দর্শনায় হরিজন সম্প্রদায় তথা বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের এক বৌভাতের অনুষ্ঠানে মাংসের সাইজ ছোট হওয়ায় সালিস বসিয়ে পাঁচ বোতল বাংলা মদসহ ২ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়েছে।

(১৬আগস্ট) রবিবার সন্ধার দিকে সম্প্রদায়ের সকল সদস্যদের উপস্থতিতিতে সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড় এ জরিমানার আদেশ দেন। পরিশোধ না করায় ওই পরিবারকে একঘরে করে দেয়ার হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। 

এঘটনায় ভুক্তোভোগী শ্রী চন্দন বাবু মানসিক নির্যাতন, অপমান অপদস্ত করা হচ্ছে উল্লেখ করে  চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

ভুক্তোভোগী শ্রী চন্দন বাবু বলেন, গত ২০ এপ্রিল নিজেদের সিন্ধান্ত অনুযায়ী কোর্ট থেকে বিবাহ রেজিট্রি করি। এরপর দুই পরিবার মেনে নেয়ায় গত ১২ অক্টোবর বরযাত্রী নিয়ে শ্বশুরবাড়ি খুলনা খালিসপুর যায়। 

পরদিন আমাদের বাসায় বৌভাতের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড়, দিতেন বাঁশফোড়, রাজু বাঁশফোড়, আকবার বাঁশফোড়, রংলাল বাঁশফোড়সহ সম্প্রদায়ের নেতাকর্মীরা মাংসের সাইজ ছোট বলে গন্ডগোল করে। পরে তারা না খেয়ে চলে যায়। 

ঘটনার দুদিন পর সন্ধার দিকে সালিসে ডেকে আমার বাবাকে পাঁচ বোতল কেরু এণ্ড কোম্পানির বাংলা মদ ও ২ হাজার টাকা জরিমানা করে। বিষয়টি আমরা না মানায় তারা আমাদের একঘরে করে দেয়ার হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এঘটনায় আমিসহ আমার পরিবার অপমান, অপদস্ত সহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সঠিক বিচারের জেলা প্রশাসক, পুলিশের নিকট অভিযোগ দিয়েছি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের দর্শনার সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সম্প্রদায়ের রীতিনীতি অনুযায়ী সামাজিক নিয়ম না মানার কারণে পাঁচ বোতল মদ ও ২ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। তারা এখনো পরিশোধ না করে উল্টো প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের নিকট বিচার দিচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, বৌভাতে মাংসের পিচ ছোট হয়েছিল। আমাদের নিয়ম অনুসারে ১ কেজি মাংসে ১০ টুকরো করতে হবে এবং তা প্রতিবেশিদের উপস্থিতি কাটতে হবে। তারা এসব মানেনি৷ আর আগেও তার মেয়ের বিয়েতে সামাজিক নিয়ম না মানার জন্য ৫ হাজার টাকা ও ১০ বোতল মদ জরিমানা করা হয়েছিল  

দর্শনা পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ড কমিশনার খালেকুজ্জামান খালেক বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। মদ ও টাকা জরিমানা করেছে। এখনো পরিশোধ করেনি। প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেছে বলে জেনেছি। 

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সিংহ রায় বলেন,  বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এই ধরনের নিয়মকানুন মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। 

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা বেগম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার আমার নিকট এসে বিষয়টি জানিয়েছে। যেহেতু জেলা প্রশাসক স্যারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আরএক্স/