অযত্নে অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক সীতারকোর্ট বৌদ্ধ বিহার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


অযত্নে অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক সীতারকোর্ট বৌদ্ধ বিহার

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৩ একর জমির ওপর অবস্থিত ঐতিহাসিক নিদর্শন সীতারকোর্ট বৌদ্ধ বিহার।পর্যটন কেন্দ্রের অপার সম্ভাবনাময় বিহারটিতে সীমানা না থাকায় পরিণত হয়েছে চারণভূমিতে। স্থাপনার বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি বেদখল হয়ে যাচ্ছে এখানকার জমি। তাই নির্দশনটি রক্ষাসহ দ্রুত সংস্কারের দাবি এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের। সংস্কারের আশ্বাস দিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বন বিভাগ।

জনশ্রুতি রয়েছে রামের পত্নী সীতাকে পঞ্চবটীর বনের গভীরে বনবাস দিয়ে তার থাকার জন্যে তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল একটি কুঠুরি। আর সেই কুঠুরি হলো সীতারকোর্ট, এমনটাই দাবি স্থানীয় হিন্দু ধর্মালম্বীদের। প্রায় ৩৫০ বর্গফুট ফুটের বিহারটিতে ছোট-বড় ৪১টি কক্ষ রয়েছে। উত্তর বাহুতে ৮টি এবং অন্য তিন বাহুতে ১১টি করে। নিপুণ হাতের ইমারতের লম্বা, মধ্যম ও ছোট ছোট ইট এবং চুন-সুরকি দ্বারা বিহারটি নির্মাণ করা হয়েছে।

১৯৬৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অনুসন্ধানকারী একটি দল নির্দশনের আংশিক অংশ খননের পর নিশ্চিত হয় এটা একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। খননের পর সে সময় বিহারের কিছু অংশ সংস্কার করা হয়। এর পরে আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিনেও বিহারটি সংস্কার না করায় বিহারের স্থাপনা ভেঙে গিয়ে বিলুপ্তির পথে। অপর দিকে বিহারে নেই কোনো শৌচাগার, বিশ্রামাগার। ফলে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

ঢাকা থেকে আসা কয়েক জন দর্শনার্থী জানান,  নবাবগঞ্জ  উপজেলাতে আশুড়ার বিল এবং পাশেই সীতারকোর্ট বিহারের অবস্থান। যার জন্য আমরা এখানে পরিবারের কয়েকজন মিলে ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে নানান সমস্যা পেয়েছি। তার মধ্যে টয়লেট এবং ভালো মানের খাবারের হোটেল না থাকায় আমরা বেশি বিপাকে পড়েছি। দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে টয়লেট, রাস্তা, ভালো মানের খাবার হোটেলের ব্যবস্থা করা জরুরি।

স্থানীয় রফিকুল নামে এক দোকানদার জানিয়েছেন, এখানে গত কয়েক বছরের চেয়ে দর্শনার্থী বেড়ে গেছে। তবে রাস্তা না থাকার কারণে দর্শনার্থী বর্ষার সময় আসতে পারে না। যদি সমস্যাগুলো সমাধান করা হতো তাহলে দর্শনার্থী আরও বাড়বে। আমাদের বিক্রিও বাড়বে, সেই সঙ্গে আয় বাড়বে।

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক জানান, আমরা ইতোমধ্যে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে ১ কিলোমিটার রাস্তা করেছি। আর সীতারকোর্ট বিহারটি বন বিভাগের জায়গায় অবস্থিত। যার কারণে টয়লেট, বসার জায়গা তৈরি করা হয়নি। যদি সরকার এগুলোকে সংস্কারের উদ্যোগ নিতো তাহলে ভালো হতো। সীতারকোর্ট বিহার সংস্কার না করা হলে এক দিন হারিয়ে যাবে। পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না ঐতিহ্যবাহী সীতারকোর্ট বিহারের কথা।

বিরামপুর সহকারি বন সংরক্ষক মাসুম আলম জানিয়েছেন, সীতারকোর্ট বিহার একটি নবাবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন। জীব ও বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই তালিকার মধ্যে সীতারকোর্ট বিহারের নাম নেই। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সম্মতি দিলে আমরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারব।

আরএক্স/