চুয়াডাঙ্গায় নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ৯


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


চুয়াডাঙ্গায় নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ৯

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতীকের কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পালটা হামলার ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের কয়েকটি অফিস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় তসলিম উদ্দিন নামে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর এক কর্মীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম সহ উভয়পক্ষের মোট নয়জন আহত হয়েছে।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ,  আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শুকুর আলীর তিনটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান টিপুর দুটি নির্বাচনী অফিস পাল্টাপাল্টি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থকের মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারী) রাত ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত তিতুদহ বাজার ও গ্রীসনগর বাজার এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে দর্শনা থানা তিতুদহ ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর আহত পাচ কর্মীরা হলেন- তিতুদহ গ্রামের মাঝেরপাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে হাসান আলী (১৮), দক্ষিনপাড়ার মৃত রহিম বিশ্বাসের ছেলে মানিক (৩৫), বড়শলুয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক (৩২), তিতুদহ গ্রামের মাঝেরপাড়ার বজলুর রহমানের দুই ছেলে শাহিন (২৬) ও রাইহান (৩০)। তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর আহত চার কর্মীরা হলেন-  তিতুদহ ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে বিদ্যুৎ মিস্ত্রী তসলিম উদ্দিন (২২), একই গ্রামের আজিজুলের ছেলে মিঠু (২২), ফকির মোহাম্মদের ছেলে আব্দুল লতিফ (৩৫) ও আব্দুল খালেকের ছেলে মাহবুব রহমান রিপন (৫০)। এর মধ্যে তসলিমের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসক। এবং বাকি তিনজন স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসক নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজেই।

আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শুকুর আলী দৈনিক জনবাণীকে বলেন, শুক্রবার রাতে আমিসহ আমার কর্মীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছিলাম। এসময় আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ তার কর্মীরা আমাদের পিছু নেই। পরে আমার তিতুদহ বাজার, দক্ষিনপাড়া ও গ্রীসনগর গ্রামের বাজারপাড়াসহ মোট তিনটি নির্বাচনী অফিসে ভাংচুর ও আগ্নিসংযোগ চালাই তারা। এসময় প্রতিবাদ করলে আমার পাচ কর্মীদের লাঠিসোটা ও ইট দিয়ে মারধর করে। পরে আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার কর্মীরা তাদের (আনারস প্রতীকের) কোন কর্মীকে মারধর ও নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করেনি। আমার কর্মীদের ধাওয়া করতে গিয়ে আনারস প্রতীকের এক কর্মীর পেটে বাশ ঢুকে গেছে। তারা নিজেরাই তাদের অফিস ভাংচুর করে আমার কর্মীদের উপর দোষারোপ করছে।

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান টিপু দৈনিক জনবাণীকে বলেন, আমার কোন কর্মীরা শোডাউন করেনি। তারা ২০ টি মোটরসাইকেল ও চারটি মাইক্রোবাস নিয়ে এমনিতেই ঘোরাঘুরি করে ফিরে আসছিল। এসময় সরোজগঞ্জ এলাকার পার হলেও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীরা আমার কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালাই। ভাংচুর করা হয় একটি মোটরসাইকেল ও দুটি মাইক্রোবাস। এসময় আমার একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং তিনজনকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে তারা। এর কিছুক্ষন পর আমার তিতুদহ দক্ষিনপাড়ার ও গ্রীসনগর বাজারপাড়াসহ মোট দুটি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করে।

তিনি আরও বলেন, নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শুকুর আলী নেতৃত্বে আমার কর্মীদের উপর হামলা, অফিস, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস ভাংচুর করে। আমার কোন কর্মী তাদের অফিস ভাংচুর ও মারধর করেনি। তারা নিজেরাই ভেঙ্গেছে এবং মারামারি করে আমার উপর উলটো দোষ চাপাচ্ছে।

এদিকে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে ইউনিয়নজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তিতুদহ ক্যাম্প পুলিশের পাশাপাশি দর্শনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। বর্তমানে পুরো ইউনিয়নজুড়ে থমথমে বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।  

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আহসানুল হক  দৈনিক জনবাণীকে  বলেন, তসলিম উদ্দিনের অবস্থা আশংকাজন। তার পেটে ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে মারা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করে পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে। বাকিদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

দর্শনা থানার ওসি এএইচএম লুৎফুল কবীর  দৈনিক জনবাণীকে বলেন, প্রথমে গ্রীসনগর বাজারে নৌকার কর্মীরা আনারস প্রার্থীর অফিস ভাংচুর করে এবং তাদের এক কর্মীকে ছুরিকাঘাত করে। এই সংবাদ শুনে তিতুদহ বাজারে অবস্থানরত আনারস প্রতীকের কর্মীরা সেখানের নৌকার অফিস ভাংচুর করে এবং তাদের এক কর্মীকে মারধর করে বলে জেনেছি। পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। এঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তিতুদহইউনিয়নে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, মেম্বর পদে ৪১ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর পদে ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন।

এসএ/