কন্দর্পদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়: শিক্ষক ও সভাপতির ঘুষ বাণিজ্য তুঙ্গে
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০২২
মো. রবিউল ইসলাম হৃদয়, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মনোহরদিয়া ইউনিয়নের কন্দর্পদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ টি পদে নিয়োগ নিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঠান্টু হোসেন ও প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে রমরমা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ এখন তুঙ্গে উঠেছে।
সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ৯ আগস্ট কুষ্টিয়ার স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় কন্দর্পদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সংবাদ। সেখানে চারটি পদে ৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
নিয়োগের জন্য ৪ টি পদের মধ্যে বিদ্যালয়ের ল্যাব অপারেটর ১ জন, নৈশপ্রহরী ১ জন, সিকিউরিটি গার্ড ১ জন, ও পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে ১ জনসহ মোট ৪ জন নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রতিটি পদের নিয়োগের জন্য ৫ থেকে ৬ টি করে আবেদন ইতিমধ্যে জমা দিয়েছে প্রার্থীরা বলে জানা গেছে। নিয়োগ আবেদনকারী প্রার্থীদের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঠান্টু হোসেন বলে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ও মনোহরদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান তালুকদার।
আব্দুল মান্নান তালুকদার জানান, কন্দর্পদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪টি পদে নিয়ােগ দেওয়া হবে। যার মধ্যে নিরাপত্তা কর্মী পদে আমার ছেলে মো. মেহেদী হাসান (বাবু) আবেদন করে। আমি জানতে পারলাম যে পদটিতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে অন্যকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানা মাত্র আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনকে জানালে তিনি আমাকে বলেন তোমার ছেলে যদি আবেদন পত্রটি প্রত্যাহার করে তাহলে সভাপতি সাহেব তোমাকে মোটা আংকের টাকা দিবে। তার এক সপ্তাহ পরে তিনি আমাকে আরও বলেন যে নৈশ প্রহরী পদের জন্য একজন ৭ লক্ষ্য টাকা দিয়েছে, তুমি যদি এর চেয়ে বেশি টাকা দেও তাহলে চাকরিটি তােমার ছেলে পাবে, আর না হলে পাবে না।
কামরুজ্জামান ডাবলু নামের একজন প্রার্থী জানান, আমি ও আমার স্ত্রী পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে আবেদন করি। তারপর ম্যানেজিং কমিটির সাথে কথা বললে তারা আমাকে এক পর্যায়ে সরাসরি বলেই ফেলে, এখানে নিয়োগ পেতে হলে অর্থ লাগবে। একজন সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হয়েছে।এই নিয়োগ যদি তুমি নিতে চাও তাহলে তোমাকে এই টাকার ডাবলের চাইতেও বেশি দিতে হবে। আমি গরীব মানুষ টাকা কোথায় পাবো। আমি চাই এই নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করে সঠিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হোক।
সাফায়েত হোসেন তালুকদার নামের এক যুবক বলেন, আমি কন্দর্পদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিকিউরিটি পদের জন্য আবেদন করেছি। আবেদন করার পরে শুনছি এখানে অনেক টাকার বিষয় লেনদেন চলছে৷ যারা যোগ্য প্রার্থী তাদেরকে চাকরী দেওয়া হচ্ছেনা। এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের সভাপতির পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়েছে তুমি যদি আবেদন প্রত্যাহার করো তাহলে তোমাকে কিছু টাকা দেওয়া হবে। আর যদি চাকরি করতে চাও তাহলে তোমাকে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তাহলে তোমার চাকরী হবে। আমার একটাই দাবি যারা যোগ্য তাদের কোন প্রকার ঘুষ বানিজ্য ছাড়াই চাকরীতে নিয়োগ দেওয়া হোক।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রমান সাপেক্ষে দেখবেন। কেউ যদি আমাকে টাকা দিয়ে থাকে সে আমার সামনে এসে বলুক তাহলে আমি স্বীকার করবো। নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে৷ এখনো ডিজির কোন প্রতিনিধি আসিনি, পরীক্ষা হয়নি, নিয়োগ হয়নি তাহলে আমি কিভাবে টাকা নিবো।
ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি ঠান্টু হোসেন বলেন, আমি টাকা নিয়েছি তার কেউ কোন প্রমান দিতে পারবে। টাকা নেওয়ার প্রমান দেখাক। আমাকে নিয়ে রাজনৈতিক কারনে এগুলো বলছে। টাকার প্রমান কেউ দেখাতে পারবেনা। আমি নিয়োগের জন্য কারও কাছ থেকে টাকা নেয়নি।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লিখিত অভিযোগের বিষয়টি আমার ঠিক মনে নেই। তবে নিয়োগ নিয়ে যদি কোন রকম ঘুষ বাণিজ্য হয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যাবস্থাগ্রহণ করা হবে।
জেবি/ আরএইচ/