সৌদিতে ফ্রি ভিসায় মিলছে না কাজ, বিপাকে প্রবাসীরা
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২২
মুহাম্মদ আলী, সৌদি আরব : পরিবারে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিয়ে আসা কিংবা একটু স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিবছর বিদেশে পা বাড়ায় লক্ষ বাংলাদেশি। উদয়াস্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করে বৈদেশিক রিজার্ভ সমৃদ্ধ করে চলেছেন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা।
এসব অভিবাসী শ্রমিকদের বিশাল অংশের শ্রমিক কাজ করে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছে। কিন্তু সৌদি আরবের পরিবর্তিত অভিবাসন আইন ও করোনাত্তোর বৈশ্বিক মন্দাসহ নানান কারণে হাজার হাজার প্রবাসী চাকরি হারা হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বিশেষ করে সম্প্রতি দেশ থেকে নতুন আসা প্রবাসীরা বিপাকে পড়েছেন সবচেয়ে বেশি।
জানা গেছে, সৌদি আরব আসার পর অনেকের ইকামা হয়নি, কারো তিন মাসের ইকামা হওয়ার পর আর ইকামা নবায়ন হয়নি। সম্প্রতি আসা প্রবাসীদের বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর ইকামার মেয়াদ না থাকায় বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বসবাস করছেন। আবার অনেকে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই লুকিয়ে কাজ করছেন। কেউ কেউ আবার ইকামার মেয়াদ বাড়াতে স্বদেশী দালালের খপ্পরে পড়ে হারিয়েছেন অর্থ।
সৌদি আরবের আর'আর (উত্তরাঞ্চল) শহরে বসবাসকারী প্রবাসী মুন্সিগঞ্জের শাহদাত হোসাইন বলেন, নতুন যারা আসতেছে তাদের ৮০ ভাগ বিপাকে পড়ছে। আগের মতো কাজ নেই বেতনও কম। অর্ধেকের মতো মানুষ কাজ পাচ্ছে না। নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ করতে হয় ১২ ঘণ্টার মতো।
তিনি আরও বলেন, দালালের মাধ্যমে যারা আসছে তারা বিপদে পড়ছে বেশি। ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মেয়াদ বাড়ানোর সময় টাকা দিতে হয়। অনেক সময় দালালরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। কাজ একটা দেওয়ার কথা বলে দেশ থেকে নিয়ে আসে কিন্তু সৌদি আরব আসার পর অন্য কাজ দেয়। চার-পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে আসার পর আর দালালের খোঁজ পাওয়া যায় না বেশিরভাগ সময়।
মুন্সিগঞ্জের আরেক বাসিন্দা প্রবাসী লিয়াকত হোসেন বলেন, আমি বাংলাদেশিদের প্রতি বলতে চাই, দালালের মাধ্যমে বিদেশে আসবেন না। এখানে অনেক লোক না খেয়ে আছে। আমি যেখানে থাকি সেখানেই এক ব্যক্তি আছেন। অনেক দিন ধরে কাজ পাচ্ছেন না। যারাই আসতে চান তারা দেখে শুনে আসেন।
বাংলাদেশী প্রবাসী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, নতুনদের নিয়ে আসার পর কফিলের কোনও খোঁজ থাকে না। যারা আসে তাদের কোনও মূল্য দেয় না দালাল ও কফিল। কাজের কোনও নিশ্চয়তা নেই। ৫-৬ মাস বসে থাকতে হয়। এর মধ্যে সৌদি আরবের পুলিশ রীতিমত চেকপোস্ট বসিয়ে ইকামা চেক করছে। ধরা পড়লেই জেল ও দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এদের দেখাশোনার কেউ নেই। আমাদের দূতাবাসও কোনও খোঁজ-খবর নেয় না। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ থেকে সৌদিগামী নতুন প্রবাসীদের জেনেবুঝে এরপর সৌদি যেতে বলছেন সৌদি আরবে বসবাসরত অভিজ্ঞ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
সৌদি শ্রম আইনের জটিলতা, রিক্রুটিং অফিস এবং দালালদের অসহযোগিতার কারণে আকামা করতে না পারায় প্রতিদিনই অবৈধ হচ্ছেন অসংখ্য প্রবাসী। এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ সবার উচিত বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
জেবি/ আরএইচ/