বেড়েছে প্রবাসে যাওয়ার হিড়িক, হচ্ছে ঋণগ্রস্ত
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, ১৫ই অক্টোবর ২০২২
আন্তর্জাতিক বাজারে সাথে বাংলাদেশেও যখন দ্রব্যমূল্যের চরম উর্দ্ধগতি, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষজন তখন সীমাহীন নাজেহাল। ঠিক এই অবস্থায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকেই চিন্তা করতে হচ্ছে বিকল্প পথে আয়-রোজগারের, তা যে পথেই হোক।
শুক্রবার (১৪অক্টোবর) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে জানা গেলো পরিবারে অর্থের জোগান দিতে সব ছেড়ে প্রবাসে যাওয়ার হিড়িকের কথা। বিভিন্ন জন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও "এখন দেয়ালে পিঠ ঠেঁকা" এমনটি-ই বোঝা গেলো তাদের বক্তব্যে।
জানা যায়, প্রবাসগামীদের অনেকেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র আবার কেউ কেউ বিভিন্ন পেশার কর্মজীবী মানুষ। উপজেলার পোড়াবাসা খাঁনমোড় বাজারে প্রায় ১৫ বছর ধরে হোল সেল ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত আঃ ছাত্তার পরিবারের জোগান মিটাতে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। একই বাজারে ১৩বছর ধরে কাপড়ের ব্যবসা করা ফরহাদ হোসেন ও ইলিয়াস আহম্মেদ, ১২বছর ধরে ফার্নিচারের ব্যবসা করা হারুন মিয়া এবং ব্যবসায়ী মিলন চন্দ্র বর্মন, নান্নু মিয়া, নুরুল ইসলাম, আলিম মাহমুদ, ঔষধ ব্যবসার সাথে যুক্ত আল -আমীন মিয়া লোকসান ও ঋনের চাপে প্রবাস জীবনের স্বাদ নিতে যাচ্ছেন। ব্যবসা ছেড়ে প্রবাস জীবন কেনো বেঁছে নিচ্ছেন জানতে চাইলে যেনো শেষ হবে না কথা, এমন-ই বক্তব্য তাদের।
আবার, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা আঠারো বছরের কম থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু দালাল চক্রের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করে কেউ কেউ তাদের স্কুল -কলেজ পড়ুয়া সন্তানদের অর্থের প্রয়োজনে পাঠাচ্ছেন প্রবাসে।
এক অভিভাবক (নাম প্রকাশ না করার শর্ত) বলেন, "দেশের যে অবস্থা পড়া-লেহা কইরা কি অবো। তার চাইয়া ঋণ-টিন কইরা পোলারে বিদেশ পাঠাইয়া দিতাছি। পাসপোটও জমা দিছি দালালের কাছে"। ওর তো শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাওয়ার বয়স হয়নি কিভাবে পাসপোর্ট বানালেন? জানতে চাইলে বলেন, "বেভাক কিছু মিল্লা ( জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট) পঁচিশ হাজার টেহা চুক্তি দিছিলাম"।
এদিকে নিজের অর্থ না থাকলেও অনেকেই স্থানীয় এনজিও অথবা ব্যক্তির নিকট থেকে মোটা সুদে ঋণ নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন প্রবাসে। আবার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকেও ঋণ নিতে দ্বারস্থ হচ্ছেন দালালের কাছে। সেখানেও দুই লাখে বিশ থেকে পঁচিশ হাজার উপঢৌকন দিতে হয় তাদের।
উপজেলার সুন্দইল পাড়া এলাকার ফজলুর রহমান। ছোট্টবেলা থেকেই বাবার সাথে হোটেল ব্যবসার সাথে জড়িত। এখন তিনিও পাঁচ সন্তানের জনক। এখন বয়সের ভারে নিজে যেতে না পেরে কিছুদিন আগে একেক করে তিন সন্তানকে বিদেশ পাঠালেও ঘুমহীন রাত কাটে তার। আঠারো লক্ষ টাকা ঋণ!
বিশেষ করে চলমান সালে এসে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নেওয়া শুরু হওয়া মাত্রই প্রবাস যাত্রার প্রবণতা আরও কয়েকগুন বেড়ে যায়। যে যেভাবে পারে পাসপোর্ট করছে আর মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য স্থানীয় আদম ব্যবসায়ীদের কাছে জমা দিচ্ছে। এই সুযোগে তারাও জন প্রতি হাতিয়ে নিচ্ছে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে।
উপজেলার দারগালী নগর সুন্দইল পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম আল মামুন বলেন, "যখন একজন মানুষ নিজের উপার্জন দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণে হিমশিম খেয়ে যায় তখন-ই বিদেশের চিন্তা করে। বর্তমান পরিস্থিতিও তাই। তবে লোকজন যেভাবে ঋণ নিয়ে বিদেশ যাওয়া শুরু করেছে একটু দেখে-শুনে যাওয়া উচিৎ। সেখানে গিয়ে ভালো কিছু করতে না পারলে তো নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় দেখি না"।
আরএক্স/