কাফনের কাপড় পরে গভীর রাতে এলাকায় ঘোরাফেরা করেছেন কবিরাজ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:১৬ অপরাহ্ন, ১৯শে অক্টোবর ২০২২


কাফনের কাপড় পরে গভীর রাতে এলাকায় ঘোরাফেরা করেছেন কবিরাজ
ছবি: জনবাণী

দাফন করা এক নারীর কবর থেকে কাফনের কাপড় চুরি হয়েছে। সেই কাফনের কাপড় পরে গভীর রাতে এলাকায় ঘোরাফেরা করেছেন এক কবিরাজ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে কেউ কেউ আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।


গতকাল (১৮ অক্টোবর) সোমবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের বড় ভালুকা গ্রামের দাসপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ওই কবিরাজের নাম উজির আলী বিশ্বাস (৫০)। তিনি এলাকায় নগ্ন কবিরাজ নামেই পরিচিত। তিনি উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের মৃত জনাব আলী বিশ্বাসের ছেলে। নিহত ওই নারীর বাবা ও এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, নগ্ন কবিরাজই কবর থেকে কাফনের কাপড় চুরি করেছে এবং ওই কাপড় পরে গভীর রাতে এলাকায় ঘোরাফেরা করেছেন। মানুষ ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ কাজের জন্য কবিরাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।


মঙ্গলবার সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) বড় ভালুকা গ্রামের ভ্যানচালক সামছুল মণ্ডলের মেয়ে ইতি খাতুন মারা যান। পরিবারের অভিযোগ, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন ইতিকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। ময়নাতদন্তের পর গত রোববার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বড় ভালুকা কবরস্থানে মরদেহের দাফন করা হয়। দাফনের পরদিন গতকাল সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকালে কবরস্থানে যান নিহতের বাবা সামছুল মণ্ডল। কবরস্থানে গিয়ে দূর থেকে মেয়ের কবরের বাঁশের ঘেরা ও চাটায় খোলা অবস্থায় দেখতে পান। কবরের কাছে গিয়ে দেখেন কাফনের কাপড় নেই। উলঙ্গ অবস্থায় মরদেহ ওপর হয়ে আছে। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে কাপড় দিয়ে মরদেহ ঢেকে পুনরায় মাটি দেওয়া হয়।


এরপর সোমবার গভীর রাতে নগ্ন কবিরাজ সাদা কাপড় ও লাল গামছা পড়ে হাতে মোমবাতি নিয়ে বড় ভালুকা গ্রামের দাসপাড়ায় ঘোরাফেরা করেন। এতে ওই এলাকার মানুষ ভয় পান। লক্ষন দাস নামের এক যুবক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর শরীরে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে।


এলাকাবাসী জানান, নগ্ন কবিরাজ প্রায় সাদা কাপড় পড়ে এলাকায় গভীর রাতে ঘোরাফেরা করে। প্রায়ই শ্মশানঘাট ও কবরস্থানে মোমবাতি জ্বালিয়ে ধ্যান করেন। কবিরাজের এসব কাজের জন্য অতিষ্ঠ ও আতঙ্কিত মানুষ। 


এ বিষয়ে নিহত মৃত ইতির বাবা সামছুল মন্ডল বলেন, ‘গত রবিবার সন্ধ্যায় মেয়ের মরদেহ দাফন করেছি। গত সোমবার সকালে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে চলে যাই। পরে পুলিশকে জানিয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমামের সঙ্গে কথা বলে আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী মিলে পরিষ্কার লাল কাপড় দিয়ে পুনরায় মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি।’



সামছুল মন্ডল আরও বলেন, ‘নগ্ন কবিরাজ ছাড়া এ কাজ কেউ করতে পারে না। আশপাশে তিনি (কবিরাজ) ছাড়া আর কোনো সাহসী লোক নেই। প্রায় ১৩ বছর আগে একই কবরস্থানে আমার ভাতিজির কবরেও গভীর রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে বসেছিল ওই কবিরাজ। তাঁর এমন জঘন্য কাজের জন্য শাস্তি চাই।’



বড় ভালুকা কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে কবরস্থানে এসে দেখি লাশের শরীরে কাপড় নেই। উলঙ্গ। পরে আবার মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। হয়তো কোনো কবিরাজ এমন ঘৃণিত কাজ করে থাকতে পারে। যেই করুক তাঁর বিচার চাই আমরা।’



দাসপাড়ার লক্ষন দাস বলেন, ‘বাড়িতে আত্মীয়রা এসেছেন। তিনজন মোড়ের ওপর দোকানে বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ দেখি কেউ একজন সাদা কাপড় আর লাল গামছা পড়ে হাতে মোমবাতি নিয়ে কাছে চলে আসছে। ভয়ে আমরা দৌড় মারি। পরে লোকজন তাঁকে আটক করে। আটকরের পর দেখি নগ্ন কবিরাজ। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার স্যালাইন চলছে।’



পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন বলেন, ‘সদ্য কবর থেকে একজন গৃহবধূর কাফনের কাপড় চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া কাপড় পড়ে এক কবিরাজ রাতে ঘোরাফেরা করছিল। মানুষ ভয়ে পেয়েছিল। পরে তাঁকে আটক করে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেননি। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।



এইচআর/