উচ্চ শিক্ষায় আমেরিকায় যাওয়ায় সমাজচ্যুত ঝর্ণার পরিবার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


উচ্চ শিক্ষায় আমেরিকায় যাওয়ায় সমাজচ্যুত ঝর্ণার পরিবার

উচ্চ শিক্ষায় আমেরিকায় গিয়ে ‘ছোট ছোট কাপড়-চোপড় পরেন এবং সেখানে এক হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছেন’ এমন অভিযোগ তুলে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ‘সমাজচ্যুত’ করে দেয়া হয়েছে নুরুননাহার চৌধুরী ওরফে ঝর্ণা চৌধুরীর নামে এক তরুণীর পরিবারকে। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে।

এ বিষয়ে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী ঝর্ণা চৌধুরীর পরিবার।

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উচ্চ শিক্ষার জন্য গত ২৬ ডিসেম্বর আমেরিকায় যান ঝর্ণা চৌধুরী নামের ওই তরুণী। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে নানা কুৎসা রটান। এরপর ২৮ ডিসেম্বর শুক্রবার স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি ঝর্ণার বাবা হাজী আব্দুল হাই চৌধুরী গুলাবের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠক ডাকেন। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ থাকায় বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি ঝর্ণার বাবা গুলাব। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে তাদের এক ঘরে করে দেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে ঝর্ণা চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে আসাকে কেন্দ্র করে এলাকার কিছু অতি উৎসাহী মানুষ স্থানীয় মসজিদে আমাকে নিয়ে বিচার ডাকেন। আমার বাবাকে সেই বিচারে উপস্থিত হতে বলেন। কিন্তু ৭০ বছর বয়সী আমার বাবার ইতোমধ্যে তিনবার মিনি স্ট্রোক করেছেন। চিকিৎসক বিশ্রামে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। সম্প্রতি তার আবার ডিমেনশিয়া (ভুলে যাওয়ার অসুখ) ধরা পড়েছে। তিনি বিচারে না যাওয়ায় অমার পরিবারকে এক ঘরে করে দেয়া হয়েছে। এই খবর পেয়ে আমি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আমিন মিয়াকে জিজ্ঞেস করি আমার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ কি? জবাবে তিনি বলেন, আমি আমেরিকায় এসে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমার পরিবারকে এক ঘরে করে দেয়া হয়েছে।’

এদিকে উচ্চ শিক্ষায় বিদেশে যাওয়ায় একজন তরুণীর পরিবারকে ‘সমাজচ্যুত’ করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তাদের শাস্তিও দাবি করছেন সকলে।

সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন, সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপারটি জেনেছি। এমন ঘটনা সমাজ এবং দেশের জন্য হুমকি। একটি মেয়েকে পেছন থেকে টেনে ধরার শামিল। যারাই এ কাজটি করেছেন তাদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনা হোক। তা না হলে ঝর্ণার পরিবারের মত দেশের আরও অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এ বিষয়ে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। 

এ ব্যাপারে ভাটেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সামান্য ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। এটি সমাধান হয়ে যাবে।’

অপরদিকে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জনবাণীকে বলেন, ‘আমাগী ১২ ফেব্রুয়ারি উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছে। সেখানে তাদের উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিষয়টি মিমাংশা করা হবে। তাছাড়া ওসি, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি- ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। ওই পরিবারের যাতে কোনরকম সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে বলা হয়েছে।’

এসএ/