ঘুরে আসুন প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড খ্যাত দার্জিলিং আর সিকিম


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, ৯ই নভেম্বর ২০২২


ঘুরে আসুন প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড খ্যাত দার্জিলিং আর সিকিম
ছবি: জনবাণী প্রতিনিধি

ভারতের উত্তর পূর্বে অবস্থিত দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য সিকিম  প্রকৃতি প্রেমিকদের কাছে এক স্বর্গ যার দক্ষিণ দিক ঘেরা আছে পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভূটান, পশ্চিমদিকে নেপাল এবং উত্তর-পূর্ব দিকে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত। সুন্দর পাহাড়, গভীর উপত্যকা এবং জীব বৈচিত্র্যে ভরা সিকিম পর্যটকদের কাছে একটি অতি পছন্দের জায়গা। গ্যাংটক এই রাজ্যের রাজধানীসহ সিকিমের বৃহত্তম শহর হিসাবেও পরিচিত এবং এটি শিবালিক পর্বতের উপরে ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। মোট ৬ লাখেরও বেশি জনসংখ্যা সহ সিকিমের মোট আয়তন হল মোটমুটি প্রায় ৭০০০ বর্গ কিলোমিটার। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা পার্বত্যময় হওয়ায় সিকিমে গ্রীষ্মকালে বেশ দারুন একটা আবহাওয়া বিরাজ করে, তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রীর বেশি অতিক্রম করে না। অন্যদিকে শীতকালে তাপমাত্রা হিমাঙ্কেরও নীচে নেমে যাওয়ার কারণে এখানকার বাসিন্দারা মেরুদন্ড শিহরিত কম্পন অনুভব করে। ১৯৭৫ সালে সিকিম, ভারতের একটি অংশ হয়ে ওঠে এবং তারপর থেকে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিকাঠামো, দেশের বাকি রাজ্যগুলির মতোই মেনে চলে। সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত ৩২ জন সদস্যকে নিয়ে এখানকার বিধানসভা পরিষদ গঠিত।


ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে সিকিমকে রাসায়নিক মুক্ত বা অর্গানিক রাজ্য হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে ২০১৬ সালে। সিকিমে চাষবাসে কীটনাশকের ব্যবহার রীতিমত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কেউ জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করলে এক হাজার চারশো ডলার বা সমপরিমাণ পর্যন্ত অর্থ জরিমানা হতে পারে। এমনকি জেল হতে পারে প্রায় তিন মাসের জন্য।


সিকিমের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সমস্তটাই বৈচিত্র্যময়। পাহাড়-পর্বত, পাহাড়ি ঝর্ণা, ঔষধি গাছের জঙ্গল, ঘন বন, সবকিছু মিলিয়ে এক আলাদা মাত্রা পায়ে সিকিম। সিকিম প্রদেশটিতে চারটি জেলায় বিভক্ত। উত্তর সিকিম, পূর্ব সিকিম, দক্ষিণ সিকিম এবং পশ্চিম সিকিম। চলুন দেখে নেই প্রতেকটি জেলার গুরুত্ত্বপূর্ণ স্থানসমূহ যেখানে ঘুরতে না গেলেই নয়।


সিকিম এর দর্শনীয় স্থানগুলো উত্তর সিকিম সিঙ্গিক, লাচুং, ইয়ুমথাং, কাটাও, কালা পাত্থার, জিরো পয়েন্ট, লাচেন, গুরুদংমার লেক। বাংলাদেশীরা কাটাও, গুরুদংমার, জিরো পয়েন্ট এর পারমিশন পাবেন না। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্যে রয়েছে রোপওয়ে, সাফি,পেরাগ্লাইডিং স্লেজ গাড়ী কায়াকিংসহ আরো অনেকগুলো  দুঃসাহসীক রাইড পাওয়া যায় পুরো সিকিমে।


পূর্ব সিকিম 


ঋষিখোলা, আরিতার, জুলুক, নাথাং ভ্যালি, কুপাপ লেক, সাজং, নাথুলা, ছাঙ্গু লেক, গ্যাংটক। বাংলাদেশী সহ বিদেশীরা নাথুলা এর পারমিশন পাবেন না।


দক্ষিণ সিকিম


নামচি, সিকিপ, টেমি টি গার্ডেন, সামদ্রূপটসে, রাবাংলা, বোরং, রিনচেনপং, কালুক।


পশ্চিম সিকিম


পেলিং, ভার্সে, ওখড়ে, গেজিং, উত্তরে, সিংসর ব্রিজ, হি-বারমিওক, ইয়াকসাম, রিনচেনপং, কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, খেছিপরি লেক।


সিকিম এ তিনটে জায়গা খুব গুরুত্বপূর্ণ – 


এক নাম্বার জায়গাটি হলো সিংতাম। এখান থেকে পূর্ব (গ্যাংটক ) আর উত্তর (মঙ্গন) সিকিম এর রাস্তা আলাদা হয়।

দুই নাম্বার জায়গাটি হলো জোরথাং। এখান থেকে পশ্চিম (পেলিং) আর দক্ষিণ (রাবাংলা) সিকিম এর রাস্তা আলাদা হয়। পশ্চিম সিকিমের যাওয়ার প্রধান পথই হলো জোড়থাং। জোড়থাং থেকে পশ্চিম সিকিমের সমস্ত জায়গার শেয়ার গাড়ী মেলে।


তিন নাম্বার জায়গাটি হলো লেগশিপ। এখান থেকে পশ্চিম (পেলিং), দক্ষিণ (জোরথাং) ও পূর্ব (রাবাংলা হয়ে গ্যাংটক) সিকিম যাওয়া যায়।

সিকিম ভ্রমণের উপযুক্ত সময় উত্তর সিকিম যাওয়ার সময় হলো সেপ্টেম্বর শেষ থেকে নভেম্বর এবং ফেব্রুয়ারী শেষ থেকে মে। এর আগে-পরে গেলে বরফে রাস্তা বন্ধ থাকার সম্ভাবনা থাকবে। এছাড়া উত্তর সিকিম খুব ধস প্রবন এলাকা, তাই বছরের যে কোনো সময়ই রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে। দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিম সারা বছরই যাওয়া যায়, তবে বর্ষায় কোনো কোনো জায়গা যেতে সমস্যা হতে পারে। পূর্ব সিকিম এ জুলুক ও নাথাং ভ্যালি এবং ছাঙ্গু লেক সহ বাবমন্দির/নাথুলা যেতে গেলে সেপ্টেম্বর শেষ থেকে নভেম্বর এবং ফেব্রুয়ারী শেষ থেকে মে এর মধ্যে যাওয়াই ভালো। গ্যাংটক যে কোনো সময়ই যাওয়া যায়।


সিকিম কিভাবে যাবেন:


এনজেপি স্টেশন বা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি বা শেয়ার জিপ মেলে গ্যাংটক যাওয়ার জন্য। দু’ জায়গাতেই প্রিপেড ট্যাক্সি পাওয়া যায়। চেষ্টা করবেন সিকিম রেজিস্ট্রেশনের গাড়ি নিতে। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেজিস্ট্রেশনের গাড়ি নিলে সেই গাড়ি নামিয়ে দেবে গ্যাংটক সিটি সেন্টারের ২ কিমি নীচে দেওরালিতে। সেখান থেকে লোক্যাল ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে পৌঁছোতে হবে।


আমরা গিয়েছিলাম চারজনঃ লেনিন ভাই, বন্ধ নয়ন শরিফ আর আমি। আমরা প্রথমে ৫ দিন আগে লালমনি এক্সপ্রেসের অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করি, তারপর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস দিয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে যাত্রা বিরতি। রাত ১১টায় আমরা লালমনি এক্সপ্রেসে যাত্রা শুরু লালমনিরহাট পৌছলাম সকাল ৯টায় সেখান থেকে আরেকটি ট্রেনে করে আরো ৯০ কিলোমিটা রাস্তায় চলে গেলাম বুড়িমারী জিরো পয়েন্টে ওখান থেকে চ্যাংড়াবান্ধা  চেকপোস্ট এর কাজ শেষ করে চলে গেলাম কুচবিহার তারপর বাসে করে জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ি যাত্রা বিরতি।


তারপর প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে দার্জিলিং ওখানে একরাত একদিন থেকে চলে গেলাম স্বপনের সিকিম এর রাজধানী গ্যাংটকে।


চাইলে কলকাতা থেকে বিমানে পাকিয়ং যেতে পারেন। পাকিয়ং থেকে জীপে গ্যাংটক।


আসলে সিকিমে ঢোকার অনেকগুলো রাস্তা রয়েছে। আপনার ট্যুর প্ল্যানের উপর ডিপেন্ড করে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন দিক দিয়ে সিকিমে ঢুকবেন।


সিকিম এর রেস্ট্রিকটেড এরিয়া কোনগুলো এবং পারমিট পাবার উপায় জেনে নিন:


সিকিম ভ্রমণে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য যা মনে রাখা আবশ্যক গ্যাংটকে রোপওয়ে চালু থাকে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত।

নাথুলা ও নর্থ সিকিম ভ্রমণে সিকিমের পর্যটন ও অসামরিক পরিবহণ দফতরের ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। কোনো রেজিস্টার্ড ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে পারেন। অনুমতিপত্রের জন্য ফটো আইডি কার্ড এবং দু’টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। সরকার অনুমোদিত যে সব ট্রাভেল এজেন্ট অনুমতিপত্র সংগ্রহে সাহায্য করতে পারেন।


নাথুলা যাওয়া যায় বুধবার থেকে রবিবার। নর্থ সিকিম ভ্রমণসূচিতে কাটাও থাকে না। সময় থাকলে গাড়ির ড্রাইভারদের অতিরিক্ত টাকা দিলে তাঁরা সানন্দে কাটাও নিয়ে যান। বাংলাদেশীদের জন্যে এটা নয়।


গ্যাংটকের সব সার্বজনীন এলাকায় ধূমপান, আবর্জনা ছড়ানো এবং থুথু ফেলা আইনত অনুমোদিত নয়।সিকিমে বিদেশীদের জন্য অবাধ প্রবেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। তাদেরকে একটি সংরক্ষিত অঞ্চলের অনুমতিপত্র বা আর.এ.পি. নিয়ে যেতে হয়। এখানে প্রবেশ বিনামূল্যে এবং শুধুমাত্র একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং একটি ভারতীয় ভিসা প্রয়োজন।


নির্দিষ্ট কিছু এলাকায়, বিশেষ করে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায়, বিদেশীদের প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। যেমন নাথুলা পাস, জিরো পয়েন্ট এসব এলাকায় বিদেশীদের প্রবেশ নিষেধ।


সিকিমে কিন্তু আধার চলে না, পার্মিট করতে হলে ভোটার কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে (ভারতীয়দের জন্যে প্রযোজ্য)।


আরএক্স/