কারাবন্দি নকল সোহাগসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কারাবন্দি নকল সোহাগসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামীর হয়ে জেল খাটার অভিযোগে নকল সোহাগ (মো. হোসেন) নামের এক ব্যক্তিসহ এই অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪–এর বিচারক জেসমিন আরা বেগম এর আদালত এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের বিশেষ কৌঁসুলি আবদুল কাদের পাটোয়ারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর দুপুরে ঢাকার কদমতলী থানাধীন আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে নান্নু জেনারেল স্টোরের সামনে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হুমায়ুন কবির ওরফে টিটু নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলি টিটুর মাথার ডান পাশে লাগে। টিটুকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় টিটুর পরিবার বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে।  মামলায় আসামিরা হলেন- কদমতলী থানাধীন মুরাদপুরের বিড়ি ফ্যাক্টরি গলির গিয়াস উদ্দিন কাঙ্গালের ছেলে সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, খালপাড়ের (নোয়াখালী পট্টি) আলাউদ্দিন শেখের ছেলে মামুন (৩৩), মুরাদপুর হাই স্কুল রোডের শফু মিয়ার ছেলে সোহাগ ওরফে ছোট সোহাগ (৩০) এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জন।

তাদের মধ্যে সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ মামলার মূল আসামি।  ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২০১৪ সালের ১৬ মে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান সোহাগ। জামিনের মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি। পরে ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর পলাতক সোহাগ ওরফে বড় সোহাগের অনুপস্থিতিতে আদালত রায় প্রকাশ করেন।  সোহাগ ওরফে বড় সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

এদিকে আদালতের রায় প্রকাশের পর দণ্ডপ্রাপ্ত সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ তার পরিকল্পনা মোতাবেক ফুফাতো ভাইকে (মৃত হাসান উদ্দিন ছেলে মো. হোসেন) ‘সোহাগ’ বানিয়ে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিন আবেদন করে। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে নকল সোহাগকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাদকাসক্ত হোসেন ওরফে নকল সোহাগ প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জেলহাজতে যায়। আসল সোহাগ নকল সোহাগকে (মো. হোসেন) জেলহাজতে পাঠানোর আগে ২-৩ মাসের মধ্যে বের করে নিয়ে আসবে বলে আশ্বস্ত করে।

২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজন জেল খাটার বিষয়টি এক সাংবাদিক আদালতের নজরে নিয়ে আসলে আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চায়। পরে কারা কর্তৃপক্ষের দাখিল করা প্রতিবেদনে ২০১০ সালে গ্রেফতার আসামি সোহাগ আর বর্তমানে হাজতে থাকা নকল সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের রিপোর্টে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।

এদিকে আসল সোহাগ ঘটনা প্রকাশের বিষয়টি বুঝতে পেরে সুকৌশলে দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করেন। এর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহ করেন তিনি। দেশত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় গত ২৯ জানুয়ারি করোনার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল মিডফোর্ড হাসপাতালে গেলে র‌্যাব-১০ এর অপারেশন টিমের হাতে গ্রেফতার হয়।

এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি কদমতলী থানার পরিদর্শক সজীব দে আদালতে এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, বড় সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ৯টি মামলা রয়েছে।

কৌঁসুলি আবদুল কাদের বলেন, মঙ্গলবার(১ ফ্রেব্রুয়ারি) আদালতে আসল সোহাগ ও নকল সোহাগকে হাজির করা হয়। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে নকল সোহাগকে আসল সোহাগ পরিচয় করিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়ে অপরাধ করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ জাল–জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হয়। আদালত নকল সোহাগসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

এসএ/