দর্শনা কেরুজ চিনিকলের জমি লীজ দিয়ে অর্থ বানিজ্যে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:১১ পূর্বাহ্ন, ১২ই নভেম্বর ২০২২


দর্শনা কেরুজ চিনিকলের জমি লীজ দিয়ে অর্থ বানিজ্যে
ছবি: জনবাণী

দর্শনার ঐতিহ্যবাহী কেরু এ্যান্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিমিটেডে বিভিন্ন অনিয়ম আড়াল করতে যখন মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠ্যান প্রধান সহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তরা, ঠিক তখনি কিছু অসাধু কর্মকর্তা অসাধু পথে হাঁটতে শুরু করেছেন। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে কর্মকর্তাদের অগচরে দেওয়া হয়েছে ফার্মের জমি লীজ। এমন অভিযোগ উঠেছে দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানী (বাং) লিমিটেডের ফুরশেদপুর ব্যাণিজ্যিক খামারের ইনচার্জ ইমদাদুল হক ও আড়িয়া ব্যাণিজ্যিক খামারের ইনচার্জ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। 


এদিকে লীজ গ্রহীতা জমি লীজ গ্রহণের পূর্বেই জমিতে শুরু করেছেন চাষাবাদ। জমি লীজের পূর্বেই জমিতে চাষের হেতু নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ! 


জানা যায় ,দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠানের অধিনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ৯টি ব্যাণিজ্যিক ও একটি পরিক্ষামূলক কৃষি খামার। এ গুরুত্বপূর্ণ চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উন্নতম ব্যাণিজ্যিক খামার। এসমস্ত খামারে চিনিশিল্প কারখানার জন্য কাঁচামাল হিসাবে আখ চাষ করা হয়ে থাকে। যে কাঁচামাল চিনি উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে। আর আখ চাষ শেষে পতিত জমিতে মৌসুমি ফসল সহ বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হয়ে থাকে।


এসমস্ত বানিজ্যিক খামারের জমি বেশ কয়েক বছর ধরে স্বল্প ও ‍দীর্ঘ মেয়াদি লীজ দেওয়া হয়ে থাকে। সেই জমি লীজ দেওয়ার সময় আসলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়ে। অন্য মিলের জমির তুলনায় দর্শনা কেরুজ চিনিকলের অধিনস্থ ব্যাণিজ্যিক খামারের বর্তমান বাজার মূল্যের চাইতে কম মূল্যে লীজ প্রদান করা হচ্ছে।

 

তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান কার্যালয় লীজ প্রদান না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় ২০২২-২০২৩ মৌসুমে লীজ প্রদান বন্ধ করে দর্শনা কেরু চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠান কেরু এ্যান্ড কোম্পানী লিমিটেডের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সকল আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের ফুরশেদপুর ব্যাণিজ্যিক খামারের ইনচার্জ ইমদাদুল হক তিনি অসুধু উপায় অবলম্বন করে ফার্মের সন্নিকটের "এফ" ব্লকের ৭ একর জমি ও আড়িয়া ফার্মের ইনচার্জ ওমর ফারুক একই পন্থা অবলম্বন করে দিয়েছেন ফার্মের "সি" ব্লকের সাড়ে ৭ একর এবং "এ" ব্লকে আরও ২.৬৫ একর জমি। যা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি পত্র ছাড়াই ফার্ম কর্তৃপক্ষের মৌখিক হস্তান্তরে লীজ গ্রহীতা শুরু করেছেন চাষাবাদ।


এদের মধ্যে ফুরশেদপুর ফার্মের জমি চাষ করছেন একই ফার্ম এলাকার ফুরশেদপুর গ্রামের আলতাব হোসেন খোকা ও ছোট সলুয়া গ্রামের সানাউল্লাহ নামের এক লীজ গ্রহীতা আড়িয়া ফার্মের "এ" ব্লক মাদ্রাসা সংলগ্ন ২.৬৫ একর জমিতে কপি আবাদ করেছেন ও "সি" ব্লকে বাকী ৭ একর জমি আবাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে প্রতিষ্ঠান হতে জমি লীজ প্রদানের পূর্বেই কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অসাধু কর্মকর্তারা ব্যাণিজ্যিক খামারের জমিতে চাষাবাদ করা নিয়ে এলাকায় যেমন চলছে আলোচনা-সমলোচনার ঝড়, তেমনি জমি লীজ না পেয়েও গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করে এর হেতু নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন? এদিকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তার সু-দৃস্টি কামনা সহ এসমস্ত অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যাবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।


লীজ গ্রহীতা সানাউল্লাহ বলেন, সকল অফিসারকে ম্যানেজ করে জমিতে চাষ শুরু করেছি। তবে দু'একদিনের মধ্যে লীজের কাগজপত্র পেয়ে যাবো।


আলতাব হোসেন খোকা বলেন, আমি ৪ একর জমি নিয়েছি মৌখিক ভাবে। তবে এখনো মূল্য নির্ধারন হয়নি।

 

ফুরশেদপুর ফার্ম ইনচার্জ ইমদাদুল হক বলেন, একর প্রতি ৩৫ হাজার টাকা দরে লীজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে  মৌখিক সিদ্ধান্তে ফার্মের "এফ" ব্লকে ৭ একর জমি লীজ দেওয়া হয়েছে।


আড়িয়া ফার্ম ইনচার্জ ওমর ফারুক বলেন, সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক খামারের ১০ একর জমি লীজ দেওয়া হয়েছে। তবে অনুমতি ব্যাতিত জমি কিভাবে লীজ গ্রহীতার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে এ বিষয়ে তিনি কোন সদত্তোর দিতে পারেনি।


উপব্যবস্থাপক (ফার্ম) সুমন কুমার সাহা বলেন, জমি লিজ গ্রহহীতার নিকট হস্তান্তরের বিষয়টি তিনার জানা নেই। বিষয়টি দেখছি বলে জানান।


তিনি আরও বলেন, নিচু জমি ও আখ চাষে অনুপযোগী ২৬/২৭ একর জমি আমরা লিজ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে একটি নোট দেওয়া হয়েছে এবং কার্যক্রম চলছে। যা পরবর্তীতে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লিজ দেওয়া হবে।


মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, জমি লীজের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে লীজের কার্যক্রম এখনো সম্পন্ন হয়নি। লিজ গ্রহহীতার নিকট জমি হস্তান্তরের বিষয়টি ফার্ম ম্যানেজার ভালো বলতে পারবে। 


ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, জমি লীজের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবিষয় জানতে ফার্ম ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করেন।


আরএক্স/